বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জোট ও ফ্রন্টের মধ্যে আসন বণ্টনের চ্যালেঞ্জ বিএনপিতে

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:০১

বিএনপি এবার ভোটে যাচ্ছে দুই পাশে দুই জোট নিয়ে। একদিকে তাদের পুরানো সঙ্গী ২০ দলীয় জোট অন্যপাশে ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এখন চলছে আসন ভাগাভাগির সমীকরন। দুই জোটের অধিকাংশ শরিক তাদের চাহিদা এবং প্রার্থীদের তালিকা দিয়েছে বিএনপির কাছে। আসন বন্টন সমন্বয় কমিটি এই তালিকা নিয়ে বৈঠকের পর তা পাঠানো হবে দলের হাইকমান্ডের কাছে। সেখানে চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হবে। ইতিমধ্যে ২৩০ জনের তালিকা দিয়েছে দলগুলো। তবে দলের সুত্র জানায়,২০০৮ সালের অনুরূপ আসন দেয়া হতে পারে ২০ দলীয় জোটকে । ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের দেয়া হবে জয়লাভ করতে পারেন এমন প্রার্থীদেরকে।

এদিকে গতকাল সোমবার বিএনপি মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। প্রথমদিনেই বিক্রি হয়েছে ১২ শত ফরম। দীর্ঘকাল পর আসন্ন নির্বাচন ঘিরে যেন প্রাণ পেয়েছে বিএনপি। দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে এখন সরগরম অবস্থা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে দলটির রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা। সারাদেশ থেকে ফরম কিনতেই নেতারা ছুটে এসেছেন ঢাকায়। সঙ্গে নিজ নিজ সমর্থকদের বিশাল বহর। নেতাকর্মীরা বলছেন, শেষ কবে এমন প্রাণখুলে বাধাহীনভাবে এমন জমায়েত করেছেন তা মনে নেই তাদের! সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ের মাইকে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান বাজতে থাকে। মাঝে মাঝে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের দিক-নির্দেশনাও দিতে শোনা যায়।

ঐক্য নিয়ে এগিয়ে যেতে বলেছেন খালেদা জিয়া

বিএনপির শীর্ষ পাঁচ নেতা গতকাল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতৎ করেছেন। সাক্ষাতৎ শেষে খালেদা জিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের জন্য যে ঐক্য করা হয়েছে, তা নিয়ে এগিয়ে যেতে বলেছেন তিনি। খালেদা জিয়া সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তার শারীরিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, অনেক দিন পর তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেলাম। ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিত্সা করা হচ্ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেখান থেকে আবার কারাগারে নেয়া হয়েছে।খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। দুপুর সোয়া ২টায় বিএনপির পাঁচ নেতা কারাগারে যান। বিএনপি মহাসচিবসহ অন্য নেতারা হলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে বিকেল সাড়ে ৪ টায় বের হন তারা।

উল্লেখ্য,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তিনটি সংসদীয় আসন থেকে খালেদা জিয়া পক্ষে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপি নেতারা। দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া আইনি জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে প্রতিদ্বনি্দ্বতা করবেন।

আসন বন্টনের সমীকরন-

এদিকে বিএনপি নেতারা মনে করছেন শরিক জোট ও ফ্রন্টের সাথে আসন বন্টন নিয়ে তাদের কোন সমস্যা হবে না।একমাত্র জামায়াতে ইসলামীর সাথে কিছুটা জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা ৬২টি আসনে বিএনপির কাছ থেকে ছাড় চেয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে অন্যতম শরিক হিসেবে জোটের সমর্থন পেলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সুনির্দিষ্টভাবে জামাযাতের বাতিল হওয়া ‘দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে’ বিগত দিনে যে আসনগুলোতে নির্বাচন করেছে এবারও সেই আসনগুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে বলা হবে।

২০০১ সালে চার দলীয় জোটের ব্যানারে ৩১টি (এরমধ্যে জোটবদ্ধভাবে ৩০টি এবং এককভাবে একটিতে) নির্বাচন করে জামায়াত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি আসনে জোটগত সমর্থন পেলেও চারটি থেকে দলীয়ভাবে করে। দলটির তৃণমূলের অভিমতের ভিত্তিতে এবার তাদের দাবি ৬২টি। তবে চূড়ান্তভাবে ত্রিশটি আসনে ন্যূনতম ছাড় চাড় জামায়াত। ২০০৮ সালে ২৬০ আসনে প্রার্থী ছিল বিএনপির। ৪০ আসন ছেড়ে দেওয়া হয় শরিকদের। জামায়াতকে ছাড় দেওয়া হয় ৩৩ আসন। বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে দুটি করে এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিকে (জাগপা) একটিসহ মোট সাতটি আসন ছেড়ে ছিল বিএনপি। দলের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নেন। ২০১২ সালে জোট সমপ্রসারণে বিএনপির শরিক বেড়েছে। সসমপ্রতি বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রটের নামে নতুন জোট করেছে বিএনপি। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নতুন ও পুরনো মিত্রদের ধরে রাখা এবং জোটে আরও শরিক বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিএনপি নেতারা গতকাল বেগম জিয়ার সাথে কারাগারে দেখা করলে তিনি ২০০৮ সালের ভিত্তিতে আসন্ বন্টন নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন বলে জানাগেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০-দলীয় জোটের অনেক দলই তাদের প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে। সব শরিক দলের কাছ থেকে প্রার্থীর তালিকা পাওয়ার পর কত আসন ছাড়া হবে, তা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমাদের মধ্যে কোন সমস্যা বা জটিলতা হবে না।

তিন আসনে খালেদা জিয়ার জন্য ফরম ক্রয়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। সকাল ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য ফেনী-১ আসনের মনোনয়ন ফরম কেনার মধ্য দিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধন করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। পরে বগুড়া-৬ আসনের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন নজরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়ার পক্ষে বগুড়া-৭ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

১ হাজার ১৯৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে

মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছে বিএনপি। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ১ হাজার ১৯৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়ার জন্য ফেনী-১ আসনে মনোনয়ন ফরম কেনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রথম দিন চাপ থাকায় রাত ৮টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়। তবে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে। ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। তবে জমা দিতে লাগবে ২৫ হাজার টাকা।

কনকচাপা, বেবী নাজনিন, হেলাল খান ফরম কিনলেন

বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চান চিত্রনায়ক হোসেন খান হেলাল ও কণ্ঠশিল্পী কনক চাপা ও বেবী নাজনীন। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে মনোনয়নপত্রের ফরম কিনেছেন। চিত্রনায়ক হোসেন খান হেলাল সিলেট বিয়ানীবাজার-৬ আসনের মনোনয়নপত্রের ফরম কিনেছেন এবং নীলফামারী-৪ আসনের মনোনয়নপত্রের ফরম কিনেছেন কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন।। সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর) আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।

ইত্তেফাক/আরকেজি