বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিদ্রোহী সামলানোর দুশ্চিন্তা বিএনপিতে

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৫২

প্রায় দশ বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। প্রার্থীদের সাক্ষাত্কার, জোট ও ফ্রন্টের সাথে আসন ভাগাভাগি আর প্রস্তুতি নিয়ে দলের নেতারা পার করছেন ব্যস্ত সময়। সারাদেশের নেতারা এখন ঢাকায়। সাথে আছেন তাদের কর্মী বাহিনীও। অপেক্ষা করছেন কবে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ঘোষণা করা হয়। আজ বুধবার মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাত্কার গ্রহণ শেষ হবে। চার দিনের এই সাক্ষাত্কারে অংশ নিচ্ছেন সাড়ে চার হাজার মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের গুলশান অফিসের সামনে রীতিমত জনসমুদ্র। সেখানে ঊত্সবের আবহ। আগামীকাল থেকে ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সাথে বসবেন বিএনপি নেতারা। আসন বণ্টনের ফায়সালার পর ঘোষণা করা হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। দীর্ঘকাল পর ভোটে আসার কারণে বিএনপিতে এবার প্রার্থীর ছড়াছড়ি। সাক্ষাত্কারে যারা যাচ্ছেন তারা প্রত্যেকেই দাবি করছেন তিনিই ‘যোগ্য’। সবাই দাঁড়াতে চান নির্বাচনে। এমপি হতে চান। কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলছেন-ধানের শীষ না পেলেও নির্বাচন করবেন। এই অবস্থায় বিএনপির দুশ্চিন্তা এখন ‘বিদ্রোহী’ সামলানো নিয়ে।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, নানা কারণে এবার প্রার্থী সংখ্যা যেমন বেশি তেমনি বিদ্রোহ দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও বেশি। চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে। প্রার্থীদের বিদ্রোহ সামাল দেয়াটা টাফ হয়ে যেতে পারে। তবে এই বিষয়টি আমরা মাথায় রেখে প্রার্থীদের সাক্ষাত্কার গ্রহণের সময় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি যা শেষ পর্যন্ত কাজে লাগতে পারে বিদ্রোহ নিরসনে। এক সঙ্গে একটি আসনের সব প্রার্থীদের ডাকা হচ্ছে বোর্ডে। সেখানে তারেক রহমান তাদের কিছু নির্দেশনা দিচ্ছেন। অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি নিচ্ছেন। আমরা যারা পার্লামেন্টারি বোর্ডে আছি তারা প্রার্থীদের মনোভাব বুঝে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিচ্ছি যে, দল যাকে প্রার্থী করবে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। যদি তার ব্যত্যয় ঘটে তবে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। দলের এই চরম দুঃসময়ে যারা দলের নির্দেশ মানবেন না-তাদের এই দল করার দরকার নেই। প্রার্থীরা বোর্ডকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে তারা সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন।

জানা যায়, একটি নির্বাচনী আসনে যত জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তাদের সবাইকে এক সঙ্গে পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক রুমে ডাকা হচ্ছে। সেখানে তাদের নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। এরপর দেয়া হচ্ছে দিকনির্দেশনা। বলা হচ্ছে— এই নির্বাচন আন্দোলনের অংশ। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে লড়াইয়ে জেতা যাবে না। কোনোভাবেই যেন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যে ফাটল না ধরে। সবাই দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় যেন কোনো কোন্দল না হয়, সে বিষয়ে কড়া নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যেসব নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে সরকারি দলকে ফাঁকা মাঠে খেলতে দেয়া যাবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হবে না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকতে হবে। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা সাক্ষাত্কারে স্পষ্ট বলছেন, এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সারা দেশে আলোড়ন ফেলেছে। জনমত ধানের শীষের পক্ষে। সুতরাং ভোটের দিন হাল ছাড়া যাবে না। যে কোনো মূল্যে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। ভোটের দিন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যও প্রস্তুতি রাখতে হবে। যাকেই দল মনোনীত করবে, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। হোক তিনি বিএনপি কিংবা জোটের প্রার্থী, সবাই তাকে জয়ী করার জন্য কাজ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দলে কোনো কোন্দল বা বিদ্রোহের আশঙ্কা নেই। সবাই দলের নির্দেশ মানতে অঙ্গীকার করেছেন। এই নির্বাচনকে শুধু নির্বাচন নয়, এটাকে আমরা আন্দোলন হিসাবে নিয়েছি। মির্জা ফখরুল বলেন, সুযোগ একটা এসেছে। হাত-পা বেঁধে রাখার মধ্যেও আমাদের এগুতে হবে। নির্বাচনে আমাদের সকল অস্ত্র নিয়ে নামতে হবে। আর সেই অস্ত্র হলো ভোটের অস্ত্র। প্রতিরোধের দেয়াল তৈরির বিকল্প নেই, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে। জনগণের শক্তি দিয়ে অবাধ নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে। এটা বাঁচা-মরার সংগ্রাম। দলের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে মির্জা ফখরুল গতকাল বলেছেন, আর পালিয়ে থাকার সময় নেই। আপনারা পালিয়ে না বেরিয়ে এবার গ্রামে গ্রামে যান। মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। সরকারের দুঃশাসনের কথা মানুষকে জানান। মনে রাখবেন, এই নির্বাচনে যাওয়া আমাদের আন্দোলনেরই অংশ।’ নির্বাচনের দিন শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা লড়াই করবো। বুকে বুক বেঁধে লড়াই করবো। ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে।

প্রসঙ্গত যে, গত ১২ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেয় বিএনপি। পাঁচ দিনে দলটির সাড়ে চার হাজারের বেশি নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এর পর গত রবিবার থেকে সাক্ষাত্কার গ্রহণ শুরু হয়। অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষাত্কার নেন তারেক রহমান। প্রথম দুই দিন স্কাইপেতে সাক্ষাত্কার নেয়ার পর বিটিআরসি স্কাইপে বন্ধ করে দেয়। ফলে গতকাল বিকল্প পন্থায় সাক্ষাত্কার নেন তিনি।

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে।

ইত্তেফাক/আরকেজি