শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:০৫

দুই বছর বা এর অধিক দণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। এমনকি নিম্ন আদালতের দেয়া ওই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন থাকলেও আপিলকারী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মর্মে এক আদেশের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দণ্ড মাথায় নিয়ে নির্বাচন করার বিষয়টি সংবিধান অনুমোদন করে না। এটা সংবিধানের মূল চেতনারও পরিপন্থি। দুর্নীতির মামলায় দেয়া সাজা স্থগিত চেয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ রায়ের ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অবকাশ থাকল না। তিনি বলেন, সাজা স্থগিত চেয়ে যারা আবেদন করেছিলেন তারা সবাই দণ্ডপ্রাপ্ত। এদের কেউ দণ্ড থেকে মুক্তি লাভ করেননি এবং মুক্তি লাভের পর ৫ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি। এমতাবস্থায় যদি তাদের দণ্ড স্থগিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হতো তা হতো আমাদের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। এ কারণে উচ্চ আদালত আমাদের যুক্তি গ্রহণ করে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এ মুহূর্তে খালাস পেলেও আগামী ৫ বছর নির্বাচন করতে পারবেন না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটা নির্বাচন কমিশনের জন্য মানা বাধ্যতামূলক। এ রায়ের বাইরে যাওয়ার এখতিয়ার কমিশনের নেই।

প্রসঙ্গত দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতে দণ্ডিত হন বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, আলহাজ মোঃ মশিউর রহমান ও মোঃ আব্দুল ওহাব এবং ড্যাব নেতা ডা. এ.জেড.এম. জাহিদ হোসেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ওই দণ্ড স্থগিত চেয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারায় হাইকোর্টে আবেদন করেন তারা।

এদের করা পৃথক ৫টি আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, আপিল হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মামলার বিচার কাজ অব্যাহত রাখারই অংশ। আর আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সংবিধোনে নেই, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপিল আদালতে ওই সাজা বাতিল না হয়। আর সাজা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আপিলকারী ব্যক্তি দণ্ডিত হিসাবে চিহ্নিত হন। আর দণ্ডিত ব্যক্তি যতক্ষণ না উপযুক্ত আদালত থেকে খালাস না পান ততক্ষণ পর্যন্ত তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। ফলে আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেয়া সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি, এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন।

প্রসঙ্গত সংবিধানের এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্থলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বত্সরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বত্সরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।” ফলে সংবিধানের এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হবেন।

আদেশে আরো বলা হয়, আবেদনকারীরা বলেছেন তারা জামিনে আছেন। আপিল বিচারাধীন এবং সাজা স্থগিত হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু এ আদালতের অভিমত হলো— আপিল বিচারাধীন বা দণ্ডিত ব্যক্তি জামিনে আছেন সাজা স্থগিতের ক্ষেত্রে এগুলো কোনো বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। আর সাজা স্থগিতের কোনো আইন দেশে নেই। এ অবস্থায় সাজা স্থগিতের আবেদন গ্রহণের প্রশ্নই আসে না। আবেদনগুলোর সারবত্তা না থাকায় তা খারিজ করা হলো।

রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন; শুনানি আজ

সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন ডা. জাহিদ হোসেন। আপিলে রায় স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে। গতকাল আবেদনটি চেম্বার জজ আদালতে উপস্থাপন করা হলে আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ওই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

খালেদা জিয়ার আপিল বিচারাধীন

দুটি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। ওই সাজার বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমরা যথাসময়ে আপিল শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে। এ জন্য আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। প্রসঙ্গত অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর দিয়েছে হাইকোর্ট। আর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালত ৭ বছরের দণ্ড দিয়েছে। এ দিকে দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান জানান, হাইকোর্টের আজকের রায়ের ফলে বিএনপির ওই ৫ নেতাসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এরা হলেন— ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, মীর মোহাম্মদ হেলাল ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোঃ সেলিম।

ইত্তেফাক/আরকেজি