বইমেলার জন্য স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ চাইলো বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, একটি ভালো মেলা করতে হলে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। দিন দিন বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। সেইদিকে লক্ষ রেখে সরকারের কাছে স্থায়ী বইমেলার স্থান বরাদ্দের দাবি জানানো হয়।
গতকাল বিকালে বাংলা একাডেমির মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে বইমেলা নিয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বলা হয়, প্রতিবছর মেলার শুরুতে ধুলা, মেলার ভেতরের পথ-ঘাট ঠিক না থাকা ইত্যাদি সব সমস্যার মূল কারণ প্রতিবছর মেলার কাঠামো নতুন করে বানাতে হয়। সেজন্য প্রতিবছরই প্রস্তুতি নিতে দেরি হয়ে যায়। কারণ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মালিক বাংলা একাডেমি নয়। তাই সারাবছর বাংলা একাডেমির নিয়ন্ত্রণে থাকে এমন একটি মেলা মাঠ প্রদানের দাবি জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। তিনি বলেন, সেখানে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান সারা বছর মেলা করতে পারবে। তবে মেলার নির্ধারিত স্থানটি বাংলা একাডেমির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে বলে জানানো হয় সাংবাদিক সম্মেলনে।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।
মেলায় মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও সাকিব আল হাসান
গতকাল এ বছর প্রথম মেলায় আসেন সবার প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মেলায় এসেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশের ক্রিকেটের বরপুত্র সাকিব আল হাসান। তিনি বর্ষাদুপুর থেকে প্রকাশিত চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাতের ‘নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে তার হাতে বাংলাদেশ ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার সমিতির বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সাকিব আল হাসান বলেন, ‘নানা ব্যস্ততার কারণে মেলায় আসা হয় না। আজকে এসে খুবই ভালো লাগছে। বেশি ভালো লাগছে আমাকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ হয়েছে বলে।’
মোড়ক উন্মোচন
গতকাল ১৩টিসহ এখনো পর্যন্ত মোট ৪৪টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে এবারের বই মেলায়।
নতুন বই
গতকাল সপ্তম দিনে মেলায় নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১৬১টি। এ নিয়ে সাতদিনে মোট ৮৩২টি নতুন বই প্রকাশিত হলো। শীর্ষে রয়েছে কবিতার বই ১৭৯টি। এর পরই রয়েছে শিশুতোষ ১৩৪, উপন্যাস ১১৩, গল্পের বই ১১৪টি, প্রবন্ধ ৬৬, বিজ্ঞান ৩৬, মুক্তিযুদ্ধ ২৯। গতকাল প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, অনুপম এনেছে আনিসুল হকের ‘বাছাইকৃত গদ্যকার্টুন, আগামী এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস ‘একলা’, প্রত্যয় প্রকাশন এনেছে সুকুমার বড়ুয়ার ছড়া ‘সুকুমার বড়ুয়ার হস্তাক্ষরে’, ও সেলিনা হোসেনের গল্পের রংধনু’, টাঙ্গন এনেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘ম্লান, ম্রিয়মাণ’, বেহুলা বাংলা এনেছে ড. শেখ মেহেদী হাসানের ‘চাওয়া-পাওয়ার গল্প, অনন্যা এনেছে মুনতাসীর মামুনের ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনী, ইতি প্রকাশ এনেছে আনিসুল হকের গল্পের বই ‘ঘোড়ার ডিম’, মহাদেব সাহার কবিতার বই ‘কোথা পাই দিব্যজ্ঞান’ মুনতাসির মামুনের ‘তাজউদ্দিন : এক যুবকের রাজনীতিবিদ হয়ে উঠা (অনন্যা), রফিকুল ইসলামের ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ ’এবং হাসনাত আবদুল হাই’এর ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ (আগামী), আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু কথা’ এবং গোলাম মুর্শিদের ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’ (কথা প্রকাশ), মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সায়েন্স ফিকশান-ষষ্ঠ খণ্ড (প্রতীক প্রকাশন)।
মেলামঞ্চের আয়োজন
গতকাল ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার সপ্তম দিন। এদিন বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাই : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. সৌমিত্র শেখর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, শহীদ ইকবাল এবং তারিক মনজুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
আরও পড়ুন: বাংলা ভাষার দাবি অগ্রাহ্য হওয়ায় ঢাকায় তীব্র বিক্ষোভ
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি রুবী রহমান এবং শিহাব সরকার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহফুজ মাসুম এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, কান্তা নন্দী, সন্দীপন দাস, সাজেদ ফাতেমী, শান্তা সরকার এবং মোঃ নূরুল ইসলাম।
ইত্তেফাক/আরকেজি