গল্প উপন্যাস কবিতার বইয়ের প্রতি সবার আকর্ষণ থাকে। তবে যারা সিরিয়াস পাঠক তাদের নানা প্রবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থের প্রতিও সমান আগ্রহ। অনেকেই বিষয়ের গভীরে যেতে চান। জানতে চান নানা বিষয়ের ব্যাখ্যা। সেখান থেকেই গবেষণা প্রবন্ধ ও বিষয়ভিত্তিক বইয়ের প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয় পাঠকের।
অবসর প্রকাশনীর প্রকাশক মোঃ আলমগীর রহমান বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে পাঠের আগ্রহ বাড়ছে পাঠকের। গল্প কবিতা সায়েন্স ফিকশন শুধু নয় অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব ইতিহাস- এমনি নানান বিষয়। সেসব বইয়ের বিক্রি তুলনামূলক কম; কিন্তু পাঠক রয়েছে। আর সেই পাঠক চাহিদা দিন দিন কমছে না বরং বাড়ছে।
প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘মানসম্পন্ন বই নির্ভর করে কিছু মানদণ্ডের ওপর। প্রথমত বইটির লেখায় নতুন চিন্তাধারা ও সৃজনশীলতার উন্মেষ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত বইটি নির্ভুল ও সুসম্পাদিত হতে হবে।’
মেলায় আসা উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে অজয় দাশগুপ্ত রচিত ‘সাত দশকের হরতাল ও বাংলাদেশের রাজনীতি’, গ্রন্থকুটির প্রকাশন এনেছে লেখক মোজাফ্ফর আহমদের ‘বাংলা সাহিত্যের নানাদিক’, উত্স প্রকাশন এনেছে হাসান শাহরিয়ারের ‘নিউজউইকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় এবং তারপর’, নবযুগ প্রকাশনী এনেছে অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের ‘এডুকেশন হিউম্যানেটি এবং হিরোইজম’, সন্জীদা খাতুনের ‘অগ্রজজনের সৃষ্টিবীক্ষা’ এনেছে নবযুগ, তৃণলতা প্রকাশ এনেছে অনুপম হায়াতের ‘গণমাধ্যমে নজরুল’, তরফদার প্রকাশনী এনেছে হায়দার আকবার খান রনোর ‘মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থিরা’, কথা প্রকাশ এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘হস্তান্তর নয় রূপান্তর চাই’, পুঁথিনিলয় প্রকাশন এনেছে বিনয় দত্তের ‘এই শহর সুবোধদের’, কানাইলাল রায়ের ‘বেদ রহস্য’ (বিজয় প্রকাশ), সাজ্জাদ আলম খানের ‘রাজনীতির আয়নায় অর্থনীতি, ‘দুর্ভাবনা ও ভাবনা; রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আকবর আলী খান (প্রথমা), ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ’ শামসুজ্জামান খান (কথাপ্রকাশ), ‘নির্বাচন ও প্রশাসন’ আবুল মাল আবদুল মুহিত (সময়), ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু কথা’ আহমদ রফিক (কথাপ্রকাশ), পলাশীর এক ইংরেজ সৈনিকের কালপঞ্জি’ সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ (প্রথমা), মোস্তফা সেলিমের ‘নাগরীলিপি: নবজীবনের জার্নাল’ (উত্স), ‘প্রত্যয় প্রতিজ্ঞা প্রতিভা’, যতীন সরকার (কথাপ্রকাশ), ‘বুদ্ধিজীবীর দায় ও অন্যান্য’ রামেন্দু মজুমদার (কথাপ্রকাশ), ‘ইতিহাসের যাত্রী’ মহিউদ্দিন আহমদ (বাতিঘর), বিশ্ব পুঁজিবাদ ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক অর্থনীতি, এম এম আকাশ (প্রথমা) প্রভৃতি।
এদিকে, শনিবার মেলার দ্বার খুলে যায় সকাল ১১টায়। দুই ঘণ্টা শিশুপ্রহরে শিশুরা আনন্দ করে। এদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসেছিল দল বেঁধে। সন্ধ্যায় মেলায় বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অনেক পাঠককে দেখা গেছে সদ্য প্রয়াত কবি আল মাহমুদের লেখা বই খোঁজ করতে।
এদিকে, গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে কবি পারভীন রেজার ‘ডাকাতিয়া জল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রমুখ।
নতুন বই
গতকাল মেলায় ২০৬টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে — সঙ্গীতা ইমামের ‘নন্দিতার বেলাভূমি’ (পাঞ্জেরী), সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘রবীন্দ্রনাথের জ্যামিতি ও অন্যান্য শিল্পপ্রসঙ্গ’ (বেঙ্গল পাবলিকেশন্স), আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলনের গল্প শোনো’ ও রেজানুর রহমানের ‘আমাদের পিকলু বাবু’ (কথাপ্রকাশ), আখতার হুসেনের ‘জাতকের সেরা গল্প’ (সংবেদ), সেলিনা হোসেনের ‘বিষণ্ন শহরের দহন’ (ইত্যাদি), ড. শামসুল আলমের ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশ’ (আলোঘর), হাসান শাহরিয়ারের ‘নিউজউইক-এ বাংলাদেশ : মুক্তিযুদ্ধ, বিষয় এবং তারপর’ (উত্স), মো. ফজলুল হকের ‘একটি কবিতার জন্য’ (অনিন্দ্য), জ্যোতির্ময় নন্দীর ভাষান্তরে ‘হ্যাকুনিন ইসশু : শত কবির শত কবিতা’ (খড়িমাটি)।
চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে স্মরণ
গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর : শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশ নেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন এবং মলয় বালা। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন আসাদ মান্নান, শাকুর মজিদ, পাপীয়া জেরিন, আবদুল্লাহ আল ইমরান, মাহফুজ রিপন।
আরও পড়ুন: হামলার জবাব দিতে কতটুকু প্রস্তুত ভারতের সেনাবাহিনী?
কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি কাজী রোজী এবং মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মুস্তাফা ওয়ালিদ এবং কাজি মাহতাব সুমন। নৃত্য পরিবেশন করেন মৈত্রী সরকারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী লীনু বিল্লাহ, চম্পা বণিক, বশিরুজ্জামন সাব্বির, প্রিয়াংকা বিশ্বাস, অপু আমান।
ইত্তেফাক/আরকেজি