বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘পথচারী নিয়ম মানলেও জীবন যায় চালকের হাতে জেব্রা ক্রসিংয়ে’

আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৯, ২১:২৩

সাধারণ মানুষ নিয়ম মানবে আর চালকরা নিয়ম মানবেন না- এমন সিস্টেমকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। সড়ক দুর্ঘটনায় আবরার আহমেদ চৌধুরীর নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।

তারানা হালিম লেখেন, ‘বুকের ভেতরে এক অসম্ভব চাপা কষ্ট। ডাক্তাররা বলেন- আনন্দ, বেদনার অনুভূতি বুকের ভেতরে সৃষ্টি হয় না, হয় মস্তিষ্কে। আমি এত কিছু বুঝতে চাই না- শুধু বুঝি হৃদয়ে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যতবার রাস্তায় দুর্ঘটনায় ঘাতক চালকের কারণে রক্তে সয়লাব হচ্ছে রাস্তা- ততবার রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার হৃদয়ে। আমার বড় বোনের ছোট ছেলে অর্ণব- কি অসম্ভব সুন্দর দেখতে, কি প্রচণ্ড হাসি-খুশি, চোখের মণি দুটো স্থির থাকে না কখনো। আমি এখনও স্পষ্ট দেখতে পাই- ওর হাসি, ওর চঞ্চলতা, ওর দুষ্টামি। দুঃখিত, আমি অর্ণবের বিষয়ে ‘ছিল’ ‘করতো’- এমন Past tense ব্যবহার করতে পারবো না।’

তিনি আরো লেখেন, ‘আমার বাবা-মা মারা যাবার পর, আমার বড় বোন আমার অজান্তেই ‘মা’ হয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই মায়ের মত বড় বোনকে আমি নির্বাক হতে দেখেছি, পাথর হয়ে যেতে দেখেছি, অসুস্থ হতে দেখেছি, বিলাপ করতে দেখেছি, ষোল-সতের বছর বয়সের ছেলেদের দেখার জন্য ফাস্ট ফুডের দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখেছি, আমার বড় বোন সড়ক দুর্ঘটনায় আকাশের ঠিকানায় চলে যাওয়া তার ছেলেটিকে কত ছেলের চেহারায় যে খুঁজেছে।’

আরো পড়ুন: ডিম বালককে বিয়ে করতে চান অস্ট্রেলীয় তরুণীরা

তারানা হালিম লেখেন, ‘কতদিন, কত মাস, কত বছর আমরা সাইফ আহমেদ অর্ণবকে হারিয়েছি জানি না। হিসাব রাখিনি। কারণ প্রতিটি দিনই সেই দিন, যে দিন অর্ণবকে হারিয়েছি। আমি খালা, আমি বলতে পারি- একদিনও কাটেনি এমন- যেদিন অর্ণবকে অনন্ত একবার মনে পড়েনি। অর্ণবের বড় ভাইয়ের, আমার দুটো ছেলের চোখে অর্ণবের জন্য শূন্যতা দেখতে দেখতে বছরের পর বছর কাটছে আমাদের।’

বাসচাপায় নিহত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরারের কথা স্মরণ করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী লেখেন, ‘আমি কখনো তোমাকে দেখিনি কিন্তু তোমার যে রক্ত বয়ে গেছে জেব্রা ক্রসিং এর উপর, তোমার রক্তে ভেজা ID CARD সব চেনা আমার। বড় চেনা। বড় আপন। পথচারীরা নিয়ম মেনে চললেও জীবন যায় বেপরোয়া চালকের হাতে- জেব্রা ক্রসিং এ পড়ে থাকা তোমার মৃতদেহই লাগলো তা প্রমাণ করতে?’

তিনি আরো লেখেন, ‘শুধু পথচারীর নিয়ম মানলেই চলবে না, চালকের ও মানতে হবে। বাস-ট্রাক মালিকদের ও মানতে হবে। সাধারণ মানুষ নিয়ম মানবে আর তারা নিয়ম মানবেন না-এমন সিস্টেম এক প্রহসন। যে সিস্টেমের অংশ আমি, আমরা সকলেই। আবরার, ঠিক জেব্রা ক্রসিং এ তোমার মৃতদেহ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল- ‘আমি নিয়ম মেনেছি,’ ‘দেখুন সকলে আমি জেব্রা ক্রসিং দিয়েই চলেছি’। এ যেন বড় এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন। বড় এক লজ্জা দিয়ে গেল সিস্টেমকে? আর ব্যক্তি আমার কাছে অচেনা আবরার, আর চেনা অর্ণব কষ্টে রক্তে একাকার হয়ে গেল। প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে সড়কে হত্যার জন্য দায়ী কয়েকজন ঘাতক চালকের দ্রুত বিচার দেখার অপেক্ষায় রইলাম।’

ইত্তেফাক/জেডএইচ