রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দিনভর বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে চলা এ বিক্ষোভের সময় অনেক অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
শিক্ষকের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে অরিত্রী অধিকারী। এতে ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠী ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না অভিভাবকরা।
এদিকে বুধবার আবারও অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুষ্ঠু বিচার না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সব পরীক্ষা বর্জন করা হবে। এছাড়া বুধবার সকাল ১০টায় ফের স্কুলের প্রধান ফটকে অবস্থান নেবে তারা। স্কুলে বর্তমানে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে।
আরো পড়ুন: ভিকারুননিসার প্রভাতী শাখা প্রধান বরখাস্ত
গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক নাসির উদ্দিন নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন কয়েকজন অভিভাবক। তারা বলেন, ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিয়ে আসার পর আর দোয়া করে, আল্লাহ নাসির স্যারের কাছে যেন খাতা না যায়। কোচিং যারা করে না, তাদেরকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। সে কারণে সবাই কোচিং করতে বাধ্য হয়।
সুলতানা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এভাবে চলতে পারে না। শিক্ষকরা আমাদের নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করে। প্রাইভেট টিউশনির জন্য কৌশলে বাধ্য করে। অথচ এ বিষয়ে অধ্যক্ষ কোন ব্যবস্থা নেন না। আমার অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তি চাই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘ক্লাসে যে বিষয়গুলো পড়ানো হয় তা পরীক্ষায় আসে না। যেগুলো শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনিতে পড়ান তা পরীক্ষায় কমন পড়ে।’
আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রণালয়, ঢাকা বোর্ড ও স্কুল কর্তৃপক্ষ পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করেছে। কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটনার কারণে অনুসন্ধান এবং এ জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্কুলে গিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।
অরিত্রী অধিকারী। ছবি: ইন্টারনেট
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মত পথ বেছে নেয় যে ঘটনাগুলো আমরা শুনেছি, এর পেছনের কথা শুনছি। ঘটনার পেছনে বা ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক মানসিক বা শারীরিকভাবে কোন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করতে পারেন না। এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য।
সোমবার রাজধানীর শান্তিনগরে ৭ তলা ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীকে। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। ওই ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে।
অরিত্রীর মা-বাবা জানান, তাদের মেয়ের স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রবিবার চলছিল সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় তার কাছে একটি মোবাইল পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অরিত্রীর মা-বাবাকে ডেকে পাঠায়। স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, অরিত্রী মোবাইলে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইত্তেফাক/জেডএইচ