বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অরিত্রীর আত্মহত্যা: অধ্যক্ষসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:২০

অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ তিনজনকে আসামি করে পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলাটি দায়ের করেন তার বাবা দিলীপ অধিকারী।

 

পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক জানান, অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আখতার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে আসামি করা হয়েছে।

 

মামলায় দিলীপ অধিকারী অভিযোগ করেন, পরীক্ষার সময় মোবাইলে নকল করার অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি (দিলীপ অধিকারী) স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তাদের অপমান করে বের করে দেয়া হয়। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়ে তার কাছে মেয়েকে পরীক্ষা দিতে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে প্রিন্সিপাল তাকে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন। প্রিন্সিপাল তার মেয়েকে স্কুল থেকে টিসি দেয়ার কথাও বলেন। এ কথা শুনে তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পা ধরে ক্ষমা চায়। তখন প্রিন্সিপাল তাকে আরো কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন। এসব সহ্য করতে না পেরে অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলছে।

 

এর আগে অরিত্রীর স্বজনরা বলেছিলেন, বাবা-মার অপমান সইতে না পেরে ঘরে ফিরে আত্মহত্যা করে ওই কিশোরী। তবে অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস অরিত্রীর অভিভাবকদের অপমান করার কথা অস্বীকার করেছেন।

 

কমিটি গঠন : অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফকে। কমিটিতে আরো আছেন মাউশির একই অফিসের উপ-পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন ও ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার বেনজীর আহমেদ। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা হলেন গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমান, অভিভাবক প্রতিনিধি তিন্নি খুরশিদ জাহান এবং শিক্ষক ফেরদৌসী বেগম। কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। এছাড়া ঢাকা শিক্ষাবোর্ডও বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রীতিশ কুমার সরকারকে প্রধান করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

 

স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার ইত্তেফাককে বলেন, তদন্তের স্বার্থে প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। আর স্কুলের সার্বিক ঘটনায় অধ্যক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তবে জিন্নাত আরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি গভর্নিং বডি।

 

কেবল ভতির্র সময় দেখা মেলে গভর্নিং বডির : গতকাল অভিভাবকদের স্কুলের অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এক অভিভাবক বলেন, অবৈধভাবে ভর্তি করে টাকা আয় করা যায় বলে তখন গভর্নিং বডি সক্রিয় থাকে। অথচ সারা বছর লেখাপড়ার ব্যাপারে তাদের তদারকি নেই। স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনিতে ব্যস্ত থাকার বিষয়টি জানলেও কোন ব্যবস্থা নেয় না গভর্নিং বডি। গভর্নিং বডি এবং অধ্যক্ষ শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাইভেট টিউশনি বাবদ কমিশন নেন বলে অভিযোগ করেন আরেক অভিভাবক। সার্বিক বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোডের্র চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, এই ঘটনায় যেই দোষী হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষক হোক আর গভর্নিং বডিই হোক সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। তদন্তের পর গভর্নিং বডি যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তারাও ছাড় পাবে না।

 

ইত্তেফাক/এএম