বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রাজস্ব ২৪ হাজার কোটি টাকা

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:০২

সরকারি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বকেয়া পড়ে আছে ২৩ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে কিছু বকেয়া অর্থ গত ১০ বছর ধরে ঝুলে আছে। এসময়ে নানামুখী উদ্যোগ, চিঠি চালাচালি কিংবা অনুরোধ জানানো হলেও অর্থ পাওয়া যায়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অর্থ আদায়ে বিশেষ জোরাজুরিও করতে পারছে না এনবিআর। এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চাপ এনবিআরের কাঁধে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চিন্তিত এনবিআর এসব অর্থ আদায়ে চলতি সপ্তাহে দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ফের বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বকেয়া রাজস্বের মধ্যে ১৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকাই পেট্রোবাংলার কাছে। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে এ বকেয়া পড়েছে। জ্বালানি তেল বিপণনের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে বকেয়া ২ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে ২৬ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে বকেয়া রয়েছে ২৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাসপোর্ট ও অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট আদায়ই করেনি বলে জানা গেছে। ফলে চূড়ান্তভাবে ওই অর্থ তাদের মওকুফ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে; কিন্তু পেট্রোবাংলা ও বিপিসি ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়নি।

সূত্র জানায়, গত চার বছর ধরেই পেট্রোবাংলা ও বিপিসির বকেয়া অর্থ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর সঙ্গে বহু চিঠি চালাচালি ও বৈঠক হয়েছে এনবিআরের। এর মধ্যে কিছু অর্থ পরিশোধও করেছে। বাদবাকি বকেয়া রাজস্ব কাগজে-কলমে প্রাপ্তি (বুক এডজাস্টমেন্ট) হিসেবে দেখানোর উদ্যোগ নেয় এনবিআর। অর্থাত্ ওই বকেয়া অর্থ এনবিআরের প্রাপ্তি হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় হিসেবে দেখানো হবে; কিন্তু অডিট সংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতায় তাও আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে এসব অর্থের সুরাহা করতে সম্প্রতি অর্থ সচিব এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে এনবিআর। সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহ আগে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিবকে পাঠানো চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি উল্লেখ করে বিপিসির বকেয়া থাকা অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ইস্যুতে গত সপ্তাহে একটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। চলতি সপ্তাহে ওই বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, অল্প কিছু বকেয়া টাকা তারা পরিশোধ করেছে। তবে দ্রুত ওই অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে শিগগিরই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করব। যাতে ‘বিশেষ’ ব্যবস্থায় ওই অর্থ পরিশোধ করে সে অনুরোধ জানাব। কারণ আমাদের বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন: গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ বাজেট চূড়ান্ত ইসির

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি মাত্র সাড়ে ছয় শতাংশ। নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এখনো সংশোধন করে কমানোর আভাস দেননি। এ পরিস্থিতিতে বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা ও আদায়ে ঘাটতির ব্যবধান কিছুটা কমানোর সুযোগ পাবে এনবিআর।

ইত্তেফাক/আরকেজি