বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শেয়ারবাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির দৌরাত্ম্য

আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:০২

শেয়ারবাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার বদলে এগুলো বাজারে থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর পাশাপাশি আইপিও আনার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা ও যাচাই-বাছাইয়ে ত্রুটি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। তাদের মতে, ভালো শেয়ার না আনলে বাজারে গভীরতা আসবে না। আবার যেনতেন মূল্যায়নে ইস্যু এনে বাজারকেও গতিশীল করা যাবে না।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আনার আগে রোড শো’র আয়োজন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই রোড শো’ শুধু খানাপিনার সংস্কৃতিই চালু করেছে। অথচ বিনিয়োগকারী কিংবা বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদের প্রশ্নাবলিরও সঠিক উত্তর দেওয়া হয় না। এমনকি প্রশ্নপর্বও সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয় না। ‘এজিএম পার্টি’র মতোই রোড শো’গুলোতেও এমন নাটকীয়তা লক্ষণীয়। এ ধরনের সংস্কৃতির অবসান না হলে প্রকৃত অর্থেই বিনিয়োগকারীরা সঠিক তথ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু আনুষ্ঠানিকতায় থাকলে বাজারে নতুন আইপিও’র কার্যকারিতাও খুব বেশি হবে না।

এদিকে, বাজারকে আস্থার জায়গায় আনতে হলে টেকসই করতে হবে। সেজন্য যেসব পদক্ষেপ জরুরি তার অনেকগুলোই নেওয়া হচ্ছে না। ডিএসই’র সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, বাজারকে টেকসই করার উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না।

তিনি বলেন, বাজারে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। এখন মুদ্রানীতি ঘোষণা করার আগে সবাই তটস্থ থাকে— না জানি বাজারের কী হয়। কেন এমনটি হবে? বাজারবান্ধব নীতি গ্রহণ না করলে এ ভয়ভীতি কাটবে না এবং বাজার টেকসই হবে না। পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটাগরি কিংবা যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কম সেগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বাজার গবেষকদের মতে, এসব কোম্পানির শেয়ারের দামে হঠাত্ উল্লম্ফন দেখা দেয়। এগুলো নিয়ে বেশি মাতামাতি হয়। তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, দুলামিয়া কটন, জিলবাংলা কিংবা শ্যামপুর সুগারের দাম কেন বাড়ে— এ প্রশ্ন অবান্তর নয়। 

তাদের মতে, মৌলভিত্তি সম্পন্ন না হলেও স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দৌরাত্ম্যে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। রয়েল ক্যাপিটালের সিনিয়র রিসার্চ এনালিস্ট আকরামুল 

আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে, কিংবা যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কম সেগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বাজারে এ ধরনের কোম্পানির অস্তিত্ব বিনিয়োগকারীদের কিছু দেওয়ার সক্ষমতা রাখে কি না কিংবা এসব কোম্পানির মার্কেটে থাকার মেরিট আছে কি না— তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার যাচাই করা উচিত বরং বাজারে ভালো কোম্পানি আনতে পারলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং টেকসই বাজার গড়া সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশীয় অনেক কোম্পানিই বাজারে আসতে চাইছে না। আর আইনি বাধ্যবাধকতায় না ফেললে কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চইবে না এটাই স্বাভাবিক। ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে যেমন আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে তিন বছরের মধ্যে বাজারে আসতে হবে, অন্যদের ক্ষেত্রেও তাই করা উচিত। যেসব কোম্পানি বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট-ট্যাক্স অব্যাহতি নিয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকরের বিধান রেখেই সুবিধা ঘোষণা করা উচিত। আবার কোনো কোনো কোম্পানি ‘উদ্দেশ্য’ নিয়েও বাজারে আসছে। বিশেষত বিদেশি ফান্ড গ্রহণ কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনে লিস্টেড কোম্পানি হিসেবে দেখাতে গিয়ে বাজারে আসছে। 

এ ধরনের আইপিও অনুমোদনে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা আবশ্যক। যদিও সার্বিকভাবে আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারকে গভীরতর করতে হলে অধিক হারে আইপিও আনতে হবে। কিন্তু আইপিও অনুমোদনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এটা কাটিয়ে উঠতে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

তবে সার্বিকভাবে বাজারের কিছু ইতিবাচক দিকের কথাও বলছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। তাদের মতে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে শেয়ারবাজার তুলনামূলক কম গতি ছিল। ১৮ সালে কৌশলগত অংশীদার ঠিক করার পর এরইমধ্যে বাজারে কিছু তহবিল এসেছে। পাশাপাশি অন্যান্য খাতে যেসব অগ্রগতি হবে, তার সুফল চলতি বছরে পাওয়া যাবে। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কাজ শুরু করলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এবং বাজারে ডেরিভেটিভসহ পণ্যে বৈচিত্র্য আসবে। যা বিনিয়োগ আকর্ষণে ভূমিকা রাখবে। 

এ ছাড়াও ইতোমধ্যে বাজারে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন অনেকগুলো অ্যাপ রয়েছে যা দিয়ে একজন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের আগে কোম্পানির তথ্যাদি পর্যালোচনা করতে পারেন। তবে কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত তথ্যে কোনো গরমিল থাকলে ভিন্ন কথা। 

আরও পড়ুনঃ রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত

তথাপি গুজব, ফাঁকি, ম্যানিপুলেশন, ইনসাইডার ট্রেডিং প্রভৃতি শেয়ারবাজারের পরিচিত (নেতিবাচক) শব্দ। এসব কারণে আস্থাহীনতা তৈরি হয়। তাই এই বাজারে জেনেবুঝে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইত্তেফাক/নূহু