বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আর্থিক সেবা খাতের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করা: ড. আতিউর

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৯, ২০:৪৯

'অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা রোধ করাটাই আর্থিক সেবা খাতের প্রধান কাজ', বলেছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। সোমবার (২৪ মার্চ ২০১৯) তিন দিনব্যাপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হাভেন কানেক্টিকাটে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিডিআই কনফারেন্সের শেষ দিনে লেখকদের প্যানেল আলোচনার বিশেষ অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন। 

ড. আতিউর সম্প্রতি প্রকাশিত তার নিজের লেখা 'টুয়ার্ডস ইনক্লুসিভ গ্রিন বাংলাদেশ' বইটি নিয়ে এ আলোচনা করেন। এই বইটিতে মূলত ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে বক্তৃতাগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে করেছেন, সেগুলো সঙ্কলিত হয়েছে। বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, 'সর্বশেষ বিশ্ব-অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী সময়ে বিশ্বের সকল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোই আর্থিক সেবা খাতের ঝুঁকি ও সম্ভাবনাগুলো বিষয়ে সকলকে সচেতন করতে ব্যাপক তৎপর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এর ব্যতিক্রম নয়। সকল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরই আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছে'। 

তিনি আরও বলেন, 'তিনি গভর্নর থাকাকালে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও এক ধাপ এগিয়ে একটি সুচিন্তিত এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ অর্থায়নের কৌশলকে সামনে নিয়ে আসতে চেষ্টা করেছে, যাতে করে উৎপাদনমুখী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি গৃহীত নীতি বাস্তবায়নে দক্ষতা ও মানবিকতার মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে এবং সকল অংশীজনের কাছে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের মূল বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে'। তার মতে এর ফলে ব্যাপক সুফল পাওয়া গেছে। প্রবৃদ্ধির ধারা শক্তিশালি থেকেছে এবং বিশ্ব মন্দা পরবর্তী অবস্থাতেও মুদ্রস্ফীতি ও বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে'।

তবে এসব অর্জনের পরেও আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই বলে মনে করেন ড. আতিউর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধির ধীর গতি এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সঙ্কটের কারণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। পাশাপাশি দেশের ভেতরে নন-পারফর্মিং ঋণের অনুপাত বৃদ্ধিও নীতি-নির্ধারকদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কাজেই অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির দিকে মনযোগ এবং দক্ষতার সাথে মানবিকতার মিশ্রণ ঘটানোকে আগামী দিনের নীতি প্রণয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে'। এ কারণে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অংশীজনের মধ্যে যথাযথ সহযোগিতার ভিত্তিতে সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ অর্থায়নের কৌশল আগামী দিনেও অব্যাহত রাখার ওপর বিশেষ জোর দেন। এ জন্য মূল্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে নতুন নতুন নির্ধারক সংযোজন এবং ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া পরিবেশগত, সামাজিক ও সুশাসন সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণে আরও উৎসাহিত করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন:  ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবি

উল্লেখ্য, এবারের বিডিআই কনফারেন্সে ড. আতিউর বেশ কয়েকটি অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এবং 'টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনা' শীর্ষক মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য লেখকরা হলেন সিপিডির ড. ফাহমিদা খাতুন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ এবং প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এমজি কিবরিয়া। বিডিআই-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মুনির কুদ্দুস অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি