বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্বব্যাপী রপ্তানি আদেশ সর্বনিম্ন পর্যায়ে

আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৫০

 

ইউরোপের সংকটকালীন সময় ২০১২ সালের পর বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি আদেশ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে বন্দরের ব্যবহার। তাছাড়া, কৃষি পণ্যের বাণিজ্য, প্রযুক্তিসহ মোটরগাড়ির বাণিজ্য কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় সব সূচক নিম্নগামী হওয়ায় বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ার আশঙ্কা করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড আউটলুক ট্রেন্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-আগস্ট) বিশ্ববাণিজ্যের গতিধারা বিশ্লেষণ করে উল্লেখ করা হয়েছে, বাণিজ্যের প্রায় সবকয়টি সূচকে অবনতি হয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বাণিজ্যের গতি আরো কমে আসবে। গেলো সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত পূর্বাভাস প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, চলতি বছর (২০১৮) শেষ নাগাদ বিশ্ববাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে, যা আগামী বছর (২০১৯) আরো কমে ৩ দশমকি ৭ ভাগ হতে পারে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, মুদ্রামানে অস্থিরতাসহ উন্নত বিশ্বে সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচকপ্রভাব ফেলছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ইত্তেফাককে বলেন, মূলত বাণিজ্য যুদ্ধের কারণেই বিশ্ব বাণিজ্যের গতি কমে আসছে। এটা দীর্ঘায়িত হলে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে কিছুটা লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশ কমে যাচ্ছে। ফলে স্বল্পকালে আমাদের গার্মেন্টস পণ্যের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু চীনের বাজারেও আমাদের অনেক কাঁচামাল রপ্তানি হয়, যেমন চামড়া। এটি চীনের বাজারে প্রবেশ করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরো উন্নত পণ্য হয়ে রপ্তানি হয়। এটি বর্তমানে কমে গেছে। এ ধরনের অনেক পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চীনের বাইরে বিকল্প বাজার খোঁজা শুরু করেছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের একটি অংশ বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়াতে শুরু করেছে। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যদি বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এই সুবিধা কতটা নিতে পারবে সেটি নির্ভর করবে সক্ষমতার ওপর। কেননা, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশও এই সুবিধা নিতে চাইবে।

উল্লেখ্য, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম চার মাস অর্থাত্ জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ১ হাজার ২১৩ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মূলত তৈরি পোশাক শিল্প নির্ভর। বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হওয়ায় রপ্তানিকারকরা বড় সুবিধা পাচ্ছে, যা রপ্তানির চিত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে। তাছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পে কিছু বাড়তি ক্রয় আদেশ আসা শুরু হয়েছে। তবে তৈরি পোশাকের বাইরে কিছু পণ্যে রপ্তানি কমেছে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী গত চার মাসে বেশকিছু পণ্যের রপ্তানি কমেছে। এই চার মাসে চামড়া জাতীয় পণ্য রপ্তানি কমেছে ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ, পাটজাতীয় পণ্য রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তৈরি পোশাকের বাইরে বাংলাদেশের অনেক পণ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ইত্তেফাক/আরকেজি