চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশ। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার বা ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য। আর পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৫৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রপ্তানির বড় খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হিমায়িত খাদ্য, চামড়া এবং পাট পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। তবে প্রধান পণ্য গার্মেন্টসের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ফলে সার্বিকভাবে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাত শতাংশেরও কম। শুধু তাই নয়, গত পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। সর্বশেষ গত নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৩৪২ কোটি ডলার। গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
সূত্র জানিয়েছে, রপ্তানি আয়ে ৮০ শতাংশের বেশি অবদান গার্মেন্টস খাতের। ফলে এ খাতের রপ্তানি হ্রাস-বৃদ্ধি রপ্তানিতে বড় প্রভাব ফেলে। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে চীনে পোশাকের উত্পাদন খরচ বাড়ছে। ফলে ক্রেতারা চীনের বিকল্প খুঁজছেন। বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে গার্মেন্টস খাতের কর্মপরিবেশ (কমপ্লায়েন্স) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে চীনের চাইতে অপেক্ষাকৃত কম খরচে পোশাক ক্রয়ের সুযোগ থাকায় ক্রেতারা বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোতে ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছেন। গত কয়েক মাসের চিত্রে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আগামী মাসগুলোতেও রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলে রপ্তানির এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিত ইত্তেফাককে বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রগতির কারণে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আস্থা তৈরি করেছে। ফলে চীনের বিকল্প হিসেবে তারা এখন বাংলাদেশকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। এছাড়া গত কয়েক মাসে কারখানাগুলোতে চীন সরকারের পরিবেশগত বিধিনিষেধের কারণে অনেক কারখানা বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার নিতে পারেনি। ওইসব ক্রয়াদেশ বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্য দেশগুলো পেয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার। ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোর আমদানির চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিগত কয়েক মাসে সেখানে গড় আমদানির তুলনায় বাংলাদেশ থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল বেশি হারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পোশাক আমদানির তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সারা বিশ্ব থেকে ইউরোপের দেশগুলোর পোশাক আমদানি গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। অথচ গত ২০১৭ সালে সেখানে বাংলাদেশে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল সোয়া চার শতাংশেরও কম। শুধু তাই নয়, আলোচ্য সময়ে ইউরোপের ২৮টি দেশে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় বাংলদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। সেখানে রপ্তানিতে বাংলাদেশের উপরে কেবল এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া।
ইপিবি’র পরিসংখ্যান পর্যালোনায় দেখা যায়, গত পাঁচ মাসে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৪১৯ কোটি ডলারের যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। রপ্তানি বৃদ্ধির তালিকায় আরো রয়েছে কৃষিজাত পণ্য ৭৭ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য ৩০ শতাংশ, কেমিক্যাল পণ্য ৪৫ শতাংশ, কাঠ ও কাঠ জাতীয় পণ্য ২২ শতাংশ, কটন ১২ শতাংশ, বিশেষায়িত টেক্সটাইল ৫৪ শতাংশ, হোম টেক্সটাইল ৩ শতাংশ, সিরামিক পণ্য ১৭৯ শতাংশ।
ইত্তেফাক/আরকেজি