জঙ্গিবাদে সম্পৃক্তা, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীর স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল এবং সাবেক দুই শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিতসহ ১৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জালিয়াতি মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. মাঈন নেওয়াজের ছাত্রত্ব স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে। প্রক্সির দায়ে চবির শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দ ফাহিম জাফরিকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত হলের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় রসায়ন বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের মিজানুর রহমান ফকিরকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উসকানি ও প্ররোচনার দায়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইমরান নাজির ইমন ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জিয়াউল হক মজুমদারকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের এমদাদুল হক এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ফাহিম হাসানকে মারধরের ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের দ্বীপায়ন দেব ও সাব্বিরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের অর্ণব বড়ুয়া ও আরবী বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জুবায়ের আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্বুল্যান্সের অপব্যবহার ও মেডিকেলের কর্মচারীদের হুমকির দায়ে অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এইচ এম হাসানুজ্জামানকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইন্সটিটিউটের দুই শিক্ষার্থীর মোবাইল, নগদ অর্থ ছিনতাই ও তাদের মারধরের ঘটনায় ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেনকে এক বছর এবং অর্থনীতি বিভাগের মামুনুর রশিদকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাব্বিরকে গত বছর সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দুই মাস বহিষ্কার করা হয়েছিল।
গত বছরের ১৪ এপ্রিল জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. আজফার হোসেনসহ ছয়জনকে আটক করেছিল পুলিশ। এরপর আজফারকে সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিঠি কোন জবাব না দেয়ায় তার ওই বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন: ভাষা সৈনিক মতিনের গ্রামে অতীতের কলাগাছে ক্ষনিকের শহীদ মিনার
এছাড়া গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে বাংলা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মো. জামশেদুল কবির ও ইতিহাস বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেনের সনদ স্থগিত ও আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মোশাররফ হোসেন শিকদারকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বহিষ্কৃতদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিষিদ্ধ ও একাডেমীক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। বহিষ্কারাদেশ, সনদ স্থগিত ও ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ বুধবার থেকে কার্যকর হবে।
ইত্তেফাক/অনি