মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এই নির্বাচন হবে কিনা শঙ্কা আছে: ড. কামাল

আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৪১

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা জনমত বুঝে গেছে। এজন্য তারা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে দিতে চায় না। নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয় ক্ষমতাসীনরা সে চেষ্টাই করছে। জোর করে আবারও ক্ষমতায় থাকার সব ধরনের চেষ্টাই তারা করছে। এমন অবস্থায় এই নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

রবিবার রাজধানীর পল্টনে জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশঙ্কার কথা বলেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, জনমত কোনদিকে আপনারা চেষ্টা করলে জানতে পারবেন। সরকারের পক্ষে আছে, নাকি সরকারের বিপক্ষে গেছে। আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমি শুধু তথ্যগুলো আপনাদেরর সামনে দিচ্ছি। আপনারা নিজেরা বিবেচনা করবেন নির্বাচন কোনদিকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীন দেশের একটি সংবিধান রয়েছে। সেখানে কীভাবে নির্বাচন হবে সে বিধান রয়েছে। দেশের মালিক জনগণ। জনগণই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে। সেজন্য নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য খুব চেষ্টা করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে মিডিয়ারও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ভোটাররা যেন স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য বাধা সৃষ্টিকারীদের শনাক্তের জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা রাখা জরুরি।

ড. কামাল বরেন, খুবই দুঃখজনক যে-ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মিছিল মিটিংকারীদের আক্রমণ করা হচ্ছে, প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গুলি করা হচ্ছে। আরও দুঃখজনক যে, এসব ঘটনার কোনো তদন্ত হয় না, কোনো আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। এসব তো খেয়াল-খুশির ব্যাপার না। 

তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন নিশ্চিত করার কথা সংবিধানে বলা হয়েছে। যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনিশ্চিত করার চেষ্টা করছে, বাধা সৃষ্টি করে, আক্রমণ করে এদের ব্যাপারে সংবিধান অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও তা নেওয়া হচ্ছে না। সে কর্তব্য পালনে আমরা ঘাটতি দেখছি। 

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, শুধু বিরোধী দলের প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, এটা অবাক কাণ্ড। তাদেরই আক্রমণ করে বন্দিও করা হচ্ছে। অথচ যারা আক্রমণকারী তারা আক্রমণ করেই যাচ্ছে। এগুলো উদ্বেগের। স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা হচ্ছে, আসলে ভোটের দিন কী হবে। নেতাকর্মী ও গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের হয়ে পাহারা দিতে হবে। ভোটের দিন যেন সেরকম কিছু না ঘটে। যাতে ভোটাররা বঞ্চিত না হন, অন্যের ভোট দেওয়া ও জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা যেন না ঘটে।

চিঠি দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সাড়া পাবেন কিনা, জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ডাক আমরা এখনো পাইনি, আশা করছি পাবো। নির্বাচনের আর ১৪ দিন বাকি, আপনারা কী মাঠে টিকে থাকতে পারবেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মাঠে টিকে থাকতে পারবো। টিকে না থাকার কোনও প্রশ্নই আসে না। আমরা তো মাঠ ছাড়িনি। কিন্তু কীভাবে আছি, তাও আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোমবার ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রকাশ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, এর আগে বাংলাদেশের কোনও নির্বাচনে প্রার্থীদের গ্রেফতার করার নজির নেই। এবার প্রার্থীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাহলে নির্বাচন হবে কীভাবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ নেই উল্লেখ করে রব বলেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই। ১৯৭১ সালে মানুষ অস্ত্র দিয়ে জবাব দিয়েছে। এবার লাঠি হাতে হলেও জবাব দেবে। সরকারকে বলবো এখনও সময় আছে, সংযত হয়ে হামলা-মামলা বন্ধ করুন। 

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সরকার, নির্বাচন কমিশন, সব প্রশাসনের লোকজন ভোটের মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিপক্ষে নেমেছে। আমাদের ওপর হামলা করার সময় পুলিশ দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে পুলিশ বলে উপরের নির্দেশ নেই। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।

ইত্তেফাক/এমআই