বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অবৈধ মোবাইলের দিন শেষ!

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:৩৪

অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের দিন শেষ! এখন থেকে আর নতুন কোনো অবৈধ সেটে সিমকার্ড চালু হবে না। শুধু ঘোষণা দিয়ে সরকারি কর পরিশোধের পর যে সেট বাজারে আসবে সেটাতেই চালু হবে সিম। তবে বর্তমানে গ্রাহকের হাতে থাকা অবৈধ সেটে যে সিমকার্ড চলছে, সেটা দিয়ে তিনি চালাতে পারবেন। এই সেটে অন্য কোনো সিম আর চলবে না। বৈধ সেটে যে কোনো সিম চালানো যাবে। আজ মঙ্গলবার বিটিআরসিতে আইএমইআই ডাটাবেজের উদ্বোধন করবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

প্রত্যেকটি মোবাইল ফোন সেটেই ১৫ ডিজিটের একটি আইএমইআই নম্বর থাকে। গ্রাহক *#০৬# ডায়াল করলেই এই আইএমইআই নম্বর ভেসে উঠে। এই নম্বরটি ১৬০০২ নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে সেটটি বৈধ না অবৈধ। বর্তমানে গ্রাহকের হাতে থাকা সবগুলো সেটই ডাটাবেজে উঠে গেছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে প্রত্যেক গ্রাহকের তথ্য নিয়ে ডাটাবেজে ঢোকানো হয়েছে। এই ডাটাবেজটি মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন তৈরি করলেও এটা নিয়ন্ত্রণ করবে বিটিআরসি। ইতোমধ্যে বিটিআরসিতে ডাটাবেজ বসানো হয়েছে। এটা হালনাগাদও সম্পন্ন হয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করছে। এখানে প্রত্যেকটি ডিভাইস নিরাপদ করার দায়িত্বও সরকারের। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আইএমইআই ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এখন যে কোনো গ্রাহক তার মোবাইল ফোন সেট নিরাপদে ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ চুরি করে সেটটি নিয়ে গেলে তিনি আর ব্যবহার করতে পারবেন না। গ্রাহকের তথ্যের ভিত্তিতে বিটিআরসি ওই সেটের আইএমইআই নম্বর সার্ভার থেকে বাদ দিয়ে দেবে। ফলে ওই সেটে নতুন কোনো সিম আর সচল হবে না। এতে ব্যক্তির নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি সরকার অবৈধ সেট থেকে যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হতো এখন সেটা হবে না।’

কিভাবে আইএমইআই ডাটাবেজে মোবাইল সেট অন্তর্ভুক্ত হবে? জানতে চাইলে বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেগুলো বৈধভাবে আমদানি হবে সেগুলো আপনাআপনি ডাটাবেজে উঠে যাবে। কেউ যদি দেশের বাইরে বেড়াতে গিয়ে সেট নিয়ে আসেন তাহলে তাকে বিটিআরসিকে জানিয়ে ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। অন্যথায় সেটটিতে কোনো সিমকার্ড চালু হবে না। একজন ব্যক্তি বছরে সর্বোচ্চ দু’টি সেট বিদেশ থেকে সঙ্গে এনে ডাটাবেজে ঢোকাতে পারবেন। কোনো গ্রাহক নতুন কোনো সেট কিনতে গেলে তিনি বক্সের গায়ে লেখা আইএমইআই নম্বরটি ১৬০০২ নম্বরে এসএমএস পাঠালেই সঙ্গে সঙ্গে ফিরতি মেসেজেই জেনে যাবেন সেটটি বৈধভাবে আমদানি করা কি-না। এরপর তিনি কিনবেন।

মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব মানিক ইত্তেফাককে বলেন, ‘২০১৭ সালে অবৈধ মোবাইল সেটের বাজার ছিল ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। যা মোট মোবাইল ফোন সেটের ৩৫ ভাগ। ২০১৮ সালে এটি বেড়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। যা প্রায় ৪০ ভাগ। এই বিপুল পরিমাণ মোবাইল সেট অবৈধভাবে বাজারে আসায় সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল তেমনি বৈধ আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। দেশে যে সংযোজন শিল্প শুরু হয়েছে সেটাও বাঁধার মুখে পড়ছিল। এখন এই ডাটাবেজের কারণে পুরো অবৈধ সেটের বাজার বন্ধ হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন: বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইএমইআই নিবন্ধন চালু হলে সিমের সঙ্গে আইএমইআই-এর নিবন্ধনে যুক্ত হয়ে যাবে। আর আগে যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিম নিবন্ধন হয়েছে তখন আইএমইআই, সিম এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তিনটি দিয়ে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে। এটা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে হ্যান্ডসেটের চুরি-ছিনতাই একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। সর্বোপরি মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবসায় শৃংঙ্খলা ফিরে আসবে। ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন জানিয়েছে, ২০১৭ সালে বৈধ হ্যান্ডসেট আমদানি হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি পিস। আর ২০১৮ সালে এটা নেমে এসেছে ৩ কোটি পিসে। তারা বলছেন, বাকি সেট অবৈধ মার্কেটে চলে গেছে। বছরে অন্তত এক কোটি হ্যান্ডসেট অবৈধ পথে বাজারে আসছে। গেল বছর যেটির পরিমাণ ছিল দেড় কোটির মতো। এই সেটগুলো থেকে সরকার কোনো ট্যাক্স পায় না।

ইত্তেফাক/আরকেজি