শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১৪৪ ধারা ভাঙা নিয়ে দুই ভাষা সংগ্রামীর স্মৃতিচারণ

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:৫৬

একুশে ফেব্রুয়ারির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল হরতাল, সভা এবং শোভাযাত্রা। কিন্তু পরে সেটি ১৪৪ ধারা ভাঙার আন্দোলনে রূপ নেয়।

এ ব্যাপারে ভাষা সংগ্রামী গাজীউল হক তার স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে: ‘রাত সাড়ে তিনটার সময় বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়াম গ্রাউন্ডের মধ্য দিয়ে মেডিক্যাল কলেজের ভেতরে ঢুকি। তখন মেডিক্যাল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় এ দুটোর মাঝখানের সীমারেখা ছিল মধুর রেস্তোরাঁর পাশে একটি ছোট্ট পাঁচিল। সে পাঁচিল টপকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকি এবং রাতের শেষ সময়টুকু বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়ে দিই। ভোর হলো— সূর্য উঠলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রথম যিনি বিশ্ববিদ্যালয় গেট পার হয়ে ভেতরে ঢুকলেন, তিনি হলেন মোহাম্মদ সুলতান। তার সঙ্গে এস এ বারী, এ টি এবং আরো দুজন।’ স্মৃতিচারণে তিনি আরো বলেন, আমরা দুজন টুকরা কাগজ, সিগারেটের প্যাকেট ছিঁড়ে কিছু চিঠি লেখা শুরু করলাম। বিভিন্ন স্কুলে এবং কলেজে। চিঠিতে লেখা হয়েছিল ‘ছোট ভাইয়েরা, সরকার ১৪৪ ধারা জারী করেছে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমরা দুজন দুজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসো।’

স্মৃতিচারণ সূত্রে জানা যায়, গাজিউল হক ও মোহাম্মদ সুলতান এমনি ধরনের চিঠি লিখে পাঠান ঢাকা ও জগন্নাথ কলেজে। মেডিক্যাল কলেজের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন তাদের আরেক বন্ধু। নাম মঞ্জুর — ডাক্তার মঞ্জুর। বাড়ী ছিল নওগাঁ। এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৈনিক ছিলেন তিনি। পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী সেদিন সকাল ৮টার পর থেকেই বিভিন্ন হল, স্কুল-কলেজ থেকে দুজন দুজন করে ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জমা হতে শুরু করে। সাড়ে নয়টার দিকে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বক্তব্য জানানোর জন্য কালো শেরওয়ানী এবং মাথায় জিন্নাহ ক্যাপ পরে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন শামসুল হক। ১৪৪ ধারা যে ভাঙা ঠিক হবে না এটা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: সা’দ অনুসারীদের ইজতেমা আজ শুরু

সেদিনের সকালের প্রস্তুতি সম্পর্কে আরেক ভাষা সংগ্রামী মোহাম্মদ সুলতানের স্মৃতিচারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার কথায় উঠে এসেছে সেদিনের আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তের কথা। তিনি বলেছেন: একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে জনাব শহীদুল্লাহ কায়সার এবং জনাব মোহাম্মদ তোয়াহা আসেন, এদেরকে ১৪৪ ধারা ভাঙতে যাচ্ছি একথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিই। আধঘণ্টা পর তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলে জানান তারা। ইতোমধ্যে রাতভর বহু পোস্টার লেখা হয়। শহীদুল্লাহ কায়সার এবং তোয়াহা সাহেব ফিরে এসেছিলেন এবং তারা বললেন, কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে ১৪৪ ধারা ভাঙা ঠিক হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যদি ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েই নেয় তাহলে যেন তা সত্যাগ্রহীর আকারে করা হয়। অর্থাত্ আমরা যে মিছিল করতে যাচ্ছি, সে মিছিল ১০ জন ১১ জন করে এক একটি দল করে যেন একে একে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়। ১৪৪ ধারা জোর করে ভেঙে সমস্ত আন্দোলনটি যাতে বিশৃংখল-বিক্ষিপ্ত রূপ না নেয় তার জন্যই আমরা এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছিলাম।’

ইত্তেফাক/আরকেজি