একটি লাইয়ার বার্ড (অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ ধরনের পাখি। তার লেজ বীণা বাদ্যযন্ত্রের মতো লম্বা। কণ্ঠস্বর খুব মধুর। সে যে কোনো পাখির কণ্ঠস্বর নকল করতে পারে। একে গায়ক পাখিও বলা যেতে পারে।) নদীর ধারে একটি গাছের ডালে বসে গান করত।
গান গাওয়ার সময় একদিন সে লক্ষ করল, নদীর পানির নিচ থেকে বুদ্বুদ উঠছে। বুদ্বুদের রং সাদা। কিন্তু একটি বুদ্বুদের রং কালো। পাখি গান বন্ধ করে বুদ্বুদগুলো দেখতে লাগল। যে বুদ্বুদটি কালো রঙের ছিল তার ভিতর থেকে অদ্ভুত এক প্রাণী বেরিয়ে এসে পদ্মপাতার ওপর উঠে বসল। প্রাণীটি হচ্ছে ব্যাঙ। ব্যাঙটি পদ্মপাতার ওপর বসে বুক এবং গলা ফোলাতে লাগল। বুক এবং গলা একবার ফুলে ওঠে একবার থেমে যায়।
লাইয়ার বার্ড ব্যাঙকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি গান গাইতে পার? ব্যাঙ কোনো জবাব না দিয়ে আগের মতো বুক ও গলা ফোলাতে থাকে। পাখি তাকে বলল, তুমি কথা বলতে পার? ব্যাঙ মাথা নাড়ল। অর্থাত্ সে কথাও বলতে পারে না। লাইয়ার বার্ড আপন মনে বলতে থাকে, এমন আজব প্রাণী আমি জীবনেও দেখিনি, যে গান গাইতে জানে না, এমনকি কথাও বলতে পারে না। পাখি যেই চলে যেতে উদ্যত হলো, অমনি আকাশ থেকে দেবতারা বলল, ওকে ফেলে তুমি যেয়ো না। ব্যাঙ তোমার ভাই। ওকে তুমি গান শেখাও।
একে অপরকে সাহায্য করা পশুপাখিদের সামাজিক রীতি। কেউ কোনো বিপদে পড়লে অন্যেরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। লাইয়ার বার্ড ব্যাঙকে গান শেখাতে শুরু করল।
অল্প কয়দিনেই ব্যাঙ গান শিখে ফেলল। যে তার গান শোনে সেই তার প্রশংসা করে। একদিন লাইয়ার বার্ড ব্যাঙকে বলল, তুমি তো দেখছি আমার চেয়ে ভালো গাইতে পার। প্রশংসা শুনে ব্যাঙের বুক গর্বে ফুলে উঠল।
ব্যাঙের গান শোনাবার জন্য লাইয়ার বার্ড একদিন বনের পশুপাখিদের দাওয়াত করল। তারা গান শুনতে এল। কিন্তু ব্যাঙের বিশ্রী চেহারা দেখে কেউ খুশি হতে পারল না। ব্যাঙ যখন গান শুরু করল তখন সবাই মুগ্ধ হলো। তার গানের প্রতিভা দেখে পশুপাখিরা প্রশংসা করল।
নিজের প্রশংসা শুনে ব্যাঙের খুব অহংকার হলো। সে আপন মনে বলতে লাগল, আমি হচ্ছি এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গায়ক। লাইয়ার বার্ড থেকেও আমি ভালো গান গাইতে পারি।
ব্যাঙকে অহংকার করতে দেখে তার বৌ বলল, এত অহংকার ভালো নয়। অহংকার পতনের মূল। ব্যাঙ বৌয়ের কথা অগ্রাহ্য করে বলল, আমি হচ্ছি বিশ্বের সেরা গায়ক। আমার গান শোনার জন্য আকাশ থেকে চাঁদ-সূর্যকেও আমার কাছে নিয়ে আসতে পারি।
রাতে যখন আকাশে চাঁদ উঠল, ব্যাঙ তখন তার দিকে মুখ করে গান গাইতে শুরু করল। চাঁদ তার দিকে ফিরেও তাকাল না। অনেক চেষ্টা করেও ব্যাঙ চাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারল না।
পরদিন আবার যখন চাঁদ আকাশে উঠল, ব্যাঙ গান গাইতে শুরু করল। প্রথমে ধীর লয়ে, মিষ্টি সুরে। চাঁদ তাতেও কর্ণপাত করল না। ব্যাঙ জোরে জোরে গান গাইতে শুরু করল। আগের রাতের মতোই চাঁদ ব্যাঙকে পাত্তা না দিয়ে আকাশ থেকে বিদায় নিল। এতে ব্যাঙ খুব অপমানিত বোধ করল।
পরদিন আকাশে চাঁদ ওঠার সাথে সাথে ব্যাঙ খুব জোরে গান গাইতে শুরু করল। চাঁদকে আজ সে গান শুনিয়েই ছাড়বে। সে ভয়ানক চিত্কার করে গান গাইতে লাগল। চিত্কার করে গান করায় ব্যাঙের কণ্ঠের স্বরতন্ত্রী ছিঁড়ে গেল। তার কণ্ঠ থেকে আর স্বর বের হতে চায় না। কেবল ফ্যাসফ্যাস শব্দ হতে লাগল। বিশ্রী কর্কশ সে কণ্ঠস্বর। মোটা গলায় ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ছাড়া আর কিছুই উচ্চারণ করতে পারল না।
অনুবাদ :শাহজাহান কিবরিয়া