শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চয়ন

দেশ কাল ও কবিতা

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:২৯

কবিতা বলতে যদি কোনও এক দেশের এক-আধ শতকের কাব্য বোঝাত তা হলে কবিতা সম্বন্ধে প্রায় সম্পূর্ণ আলোচনা বেশি সহজসাধ্য হত; বেশি সফলতা, প্রায় গাণিতিক শুদ্ধি আশা করা যেতে পারত। কিন্তু এখনকার দু’-এক শতকের কবিতা ছাড়া আরও কবিতা আছে নানা দেশে। বিশেষ সুধী মানুষদের পক্ষেও এই যাবতীয় প’ড়ে দেখা সম্ভব নয়। সে-রকম অধ্যয়নের কোনও দরকারও নেই। কিন্তু এ-দেশ ও অন্য কোনও-কোনও দেশের কয়েক শতকের প্রথম শ্রেণির কবিতার সঙ্গে যত বেশি পরিচয় থাকে সমালোচকের—বেশি স্পষ্ট আয়তগভীর ধারণায় পৌঁছনো তাঁর পক্ষে ততই সুসাধ্য হয়। কাব্য সম্বন্ধে কোনও ধরা-বাঁধা সংস্কার নিয়ে এ-সব দেশ ও সময়ের কবিতা পড়া উচিত হবে না। বিপ্লবী বা নির্বিপ্লবী, কিংবা সমাজ ও ধর্ম ইত্যাদির মুখপাত্র হওয়া উচিত কবিতার অথবা এ-সব জিনিসের দিকে মোটামুটি পিঠ ফিরিয়ে অবচেতনে ও নির্মনে সিদ্ধি লাভ করা উচিত—এ-রকম কোনও অনমনীয় ধারণা নিয়ে কবিতা পাঠ করতে গেলে নানা রকম উপকরণ সংগ্রহ হবে, কিন্তু সমালোচকের বোধ জ্ঞানে পরিণত হতে পারবে না। যে-কোনও সাধারণ বুদ্ধিমান পাঠকই অনেক কাব্য প’ড়ে পণ্ডিত হতে পারেন, কিন্তু সুজাত সমালোচক ও-রকম পাঠকের চেয়ে কম কবিতা প’ড়েও কাব্যজিজ্ঞাসা সম্বন্ধে বেশি জ্ঞানগভীর হবেন। পড়া দরকার বটে যত বেশি সম্ভব দেশ ও কালের কবিতা; কিন্তু খারাপ কবিতার থেকে ভালো কবিতা বেছে নেওয়ার কুশলতা, নানা রকম কবিতার জাতি ও স্তর নির্ণয় করবার ক্ষমতা সকলের এক থাকে না। এ-বিষয়ে স্বভাবতই কারও বেশি শক্তি থাকে অন্যদের চেয়ে, কবিতা প’ড়ে স্বভাবতই বেশি স্বাদ পান তিনি; কোন কবিতা সার্থক—এবং কী ধরনের, কোন প্রস্থানের, অনুভব ক’রে, কবিতা কখন বিশেষ আলোকসত্ত্ব হল সেটা পরে ভালোভাবে বিশ্লেষণ ক’রে স্থির করতে হয় তাঁকে, কিন্তু কবিতাটি পড়বার সঙ্গে-সঙ্গেই এটা ঠিক, বা ততটা ঠিক নয়—সমর্থন অসমর্থন আসতে থাকে। ভালো সমালোচকের মন অনেক বেশি কবিতা প’ড়ে আরও কুশলী হয়ে উঠবার আগেও এ-রকম খানিকটা পরিষ্কারভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়। এটা হচ্ছে সম্ভাবনা, সিদ্ধি নয়; প্রাথমিক সম্ভাবনা নয় যদিও; তার চেয়ে উপরের জিনিস। এই উপলব্ধি নিয়ে দেশ-সময়ের যত বেশি সম্ভব শ্রেষ্ঠ সব কবিতা পড়া দরকার—ক্রমেই বেশি বোধ লাভ করতে হলে।

কবির ‘কবিতার কথা’ বই (ফয়জুল লতিফ চৌধুরী সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ২০১৭) থেকে 

 স্কেচ :সত্যজিত্ রায়