নারীর গৃহস্থালী কাজের আর্থিক স্বীকৃতি দিয়ে অর্থনীতিতে নারীর অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, নারীর গৃহশ্রম ও সেবামূলক কাজকে যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় তাহলে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের পরিবর্তন, সমাজে নারীর গুরুত্ব অনুধাবন এবং নারীর প্রতি পুরুষের শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘করের টাকা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করতে হবে’ শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। গ্লোবাল ডেইজ অব অ্যাকশন উপলক্ষে ‘ইক্যুইটিবিডি’ এর আয়োজন করে।
আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারী ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, অর্থনীতিতে নারীর অবদান বাড়লেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো আশানুরূপ নয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে জড়িত শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগই নারী। তবে একই ধরনের শ্রমের সাথে যুক্ত থাকলেও পুরুষের তুলনায় মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম ভোগ করেন নারীরা। অন্যদিকে এই নারীদেরকেও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি, বিদ্যুত্ ইত্যাদি সবার মতো একই দাম দিয়ে কিনতে হয়। তার জন্য নেই বিশেষ কর মওকুফের ব্যবস্থা বা করনীতি, যা কি না হবে নারীবান্ধব। গৃহশ্রমসহ অন্যান্য সেবামূলক কাজে নারীরা পুরুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি সময় দেন। কিন্তু নারীর এই শ্রমকে জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। যার আর্থিক মূল্য জিডিপি’র প্রায় ৭৭ শতাংশের সমান।
বাংলাদেশ কিষাণী সভার সভাপতি রেহানা আকতার বলেন, নগরীতে হাতে গোনা কয়েকটি গার্মেন্ট ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কর্মজীবী মায়ের সন্তানদের জন্য নেই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। তিনি কর্মক্ষেত্রে সমতা আনার জন্য নারীবান্ধব পরিবেশ ও শিশুর জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র তৈরিতে সরকারের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে জানান।
কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীদের কর্মসংস্থান আরো বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন কাঠামোয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
মানববন্ধনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে বলা হয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, বিদ্যুত্ খাতের বেসরকারিকরণ নয়। সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য কমাতে হবে। দক্ষ নারী শ্রমিক তৈরি করতে হবে। নারীপ্রধান পরিবারের ওপর করের বোঝা নয়। নারীর সকল কাজের আর্থিক মূল্য বিবেচনা করতে হবে। করের টাকা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করতে হবে এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।