শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাল্টে গেছে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের দৃশ্যপট

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৩৫

শাহীন হাফিজ, বরিশাল অফিস

পাল্টে গেছে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের দৃশ্যপট। কারাগার এখন আর দুঃখ, কষ্ট বা সাজা ভোগ করার জায়গা নয়। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এটি হয়ে উঠেছে ক্রমশ সংশোধনাগার হিসেবে। বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি, কয়েদী ও দর্শনার্থীদের আগের মতো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। এ কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়মিত বন্দিদের কাছ থেকে তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে অভাব-অভিযোগ শুনে তা সমাধান করছেন জেলার। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসক, দায়রা জজসহ সরকারি ও বেসরকারি কারা পরিদর্শকগণ নিয়মিতভাবে কারাগার পরিদর্শনের ফলে বন্দিদের কারা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে নগরীর হাসপাতাল রোডের নাজির মহল্লা সংলগ্ন ২০ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৬শ’ পুরুষ ও ৩৩ জন নারী বন্দি ধারণক্ষমতার এ কারাগারে রয়েছে ৪তলা ও ৩ তলা বিশিষ্ট ভবন। কারাগারে ৫টি বন্দি ভবন, ৫৮ বেডের ১টি কারা হাসপাতালে একজন চিকিত্সক সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে ১টি কিশোর ওয়ার্ড, ১টি লাইব্রেরি, ১২টি সেল, ১টি ক্যান্টিন ও সিনিয়র জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলারের জন্য আবাসিক ভবন এবং পুরুষ ও নারী কারারক্ষীদের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক ব্যারাক। বর্তমান এ কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার, জেলারসহ মোট ৩৩৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্বে রয়েছেন। এদের মধ্যে ২৫১ জন পুরুষ কারারক্ষী ও ১১ জন মহিলা কারারক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব রক্ষীসহ স্টাফদের বছরে ৪১ দিন ছুটিভোগ নিশ্চিতসহ তাদের ক্লাবঘরে টেলিভিশন, ফ্রিজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারাগারের দৃশ্যপট পরিবর্তন ও রক্ষীদের জন্য দু’টি বহুতল ভবন নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।

জেলার মো. ইউনুস জামান বলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৬ মাসে কারাভ্যন্তরকে সম্পূর্ণভাবে মাদক মুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও কারাভ্যন্তরে অবৈধ দ্রব্যাদি রোধে নিয়মিত তল্লাশিসহ সন্দেহভাজন বন্দী ও স্টাফদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কারা ক্যাম্পাসকে মোবাইল মুক্ত করে দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে সাক্ষাত্ নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ৬ মাসের ব্যবধানে ৩শ’ জন হতদরিদ্র বন্দিকে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আগে হাজতি ও কয়েদিদের চিত্ত বিনোদনের তেমন কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা ছিল না। এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে রেডিও শোনার ও টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে ফুটবল, ভলিবল, কেরাম, দাবা, কাবাডি ও লুডু খেলার ব্যবস্থা।

এছাড়াও বন্দীদের শরীর ঠিক রাখার জন্য ব্যায়াম ও শরীর চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে। কারাগারের পরিবেশকে সুন্দর করার জন্য চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান, বন্দিরা বসে আনন্দে সময় কাটানোর জন্য পাকা পাঠাতনের বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও পুকুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, রাতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, গান বাজনা করার জন্য ঢোল-তবলা, হারমোনিয়াম, বাঁশি ও বেহালার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হাজতি বা কয়েদিরা যাতে জেল থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে তার জন্য নিরক্ষরতা দূরীকরণ, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজ নিজ ধর্ম পালনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও তাদেরকে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ ও মহিলাদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সমন্বয়ে এ কেন্দ্রীয় কারাগারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে বর্তমান সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক ও জেলার মোঃ ইউনুস জামান বিগত ছয় মাস নানা কর্মপরিকল্পনা করে তা নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে কারাগারের বন্দীদের নানান অপকর্ম হাতে-নাতে ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় সফলতা মিলেছে। এ ছাড়াও বিপথগামী রক্ষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ায় বর্তমানে কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যদিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এ কারাগার। বিশেষ করে প্রশাসনের বিভিন্ন সময়ে বিশেষ অভিযানে আটক ধারণ ক্ষমতার অধিক বন্দি হলেও এ কারাগার কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়নি। এখানে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় কারা কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। সম্প্রতি তিন বছর কারাভোগের পর এ কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ায় এক বন্দি কারাগারের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানান, গত কয়েক মাস যাবত্ কারাগারের খাবারসহ সকল কার্যক্রমে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে কারাগারে এসে কঠোর নিয়মানুবর্তিতায় যে কোনো ধরনের দাগী আসামি হোক না কেন কোনো অপকর্মের সুযোগ নেই।