শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শুঁটকি উত্পাদনে ব্যস্ত উপকূলের ১০ হাজার নারী-পুরুষ

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৩৬

পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা

বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছরের মতো এ মৌসুমেও বিভিন্ন চরে শুঁটকি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শুঁটকি তৈরির এ কর্মযজ্ঞকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয় উপকূলীয় এলাকার প্রায় দশ হাজার নারী-পুরুষের। আর এখানকার শ্রমিকরা এখন শুঁটকি তৈরিতে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বরগুনার লালদিয়া, আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা চরের, শুঁটকি পল্লীতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাস ধরে চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। শুঁটকিকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় হাজার হাজার জেলে ও মত্স্যজীবীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে এসব চরগুলো।

সরেজমিনে দেখা যায়, গভীর সাগর থেকে জেলেরা মাছ নিয়ে দেশের বৃহত্তম মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা ঘাটে ভিড়ছেন। ব্যবসায়ীরা সেই মাছ কিনে পল্লীতে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর ধুয়ে মুছে কাটা-বাছার পর শুঁটকির জন্য বাঁশের তৈরি মাচায় রোদে শুকাচ্ছেন। আবার কেউ বস্তায় ভরছেন শুঁটকি মাছ। প্রচলিত পদ্ধতিতে শুকানো এই শুঁটকি নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। এখানের উত্পাদিত শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। এ সময় প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি দেখা যায়। আহরিত মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, রইস্যা, পোয়া,  কোরাল, ফাত্রা, মাইট্যা, রূপচাঁদা, ইলিশ, লাক্ষা, চিংড়ি, রাঙ্গাচকি, হাঙ্গর, রিটা, ফুটকা, কাঁকড়া, লবষ্টার, সামুদ্রিক শসা, হাঙ্গরের বাচ্চা ও বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।

বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, রূপচান্দা ৮০০ থেকে ১ হাজার, মাইট্যা ৫০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৪০০ থেকে ৮০০, কোরাল ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০, পোপা ৪০০ থেকে ৮০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছ ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও এখানকার শুঁটকি পল্লীর মাছের গুঁড়ি সারাদেশে পোল্ট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে। কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার বন্ধ, স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরি, বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি তৈরির প্রযুক্তি সরবরাহ এবং এখাতে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে শুঁটকি রপ্তানিতে অনায়াসে শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।

উপকূল জুড়ে শুঁটকি উত্পাদনের বিরাট সম্ভাবনা থাকলেও পদে পদে রয়েছে বাধা। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর বাজারজাতকরণে বহুমুখি সমস্যার কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই শিল্পে আরও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

পাশাপাশি এ শিল্পে জীবিকা নির্বাহ হতে পারে বহু মানুষের। বাংলাদেশের সমুদ্র তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা পাথরঘাটায় রয়েছে শুঁটকি উত্পাদনে অফুরন্ত সম্ভাবনা।