এককালের খরস্রোতা বাঙ্গালী নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদী শুকিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় ক্ষীণ ধারা বইছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় নদীর বুক জুড়ে চাষ হচ্ছে ফসল। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালি ও এলাই নদীর মিলনস্থলে এই নদীর উত্পত্তি হয়ে গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ২১৭ কিলোমিটার এই নদী বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বাঙ্গালী নদী নামে পরিচিত। শেরপুর উপজেলায় এর নাম করতোয়া। সিরাজগঞ্জ জেলায় এই নদীর নাম ফুলজোড় ও হুরাসাগর। হুরাসাগর নামে এই নদী বাঘাবাড়ি ঘাটের ভাটিতে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলেছে।
সারিয়াকান্দি বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান প্রামাণিক, মোফাজ্জল মণ্ডল, চাল ব্যবসায়ী হায়দার আলী জানান, একদা বাঙ্গালী ছিল প্রবহমান খরস্রোতা নদী। সারা বছর নদীর বুকে পালতোলা সওদাগরী নৌকা চলাচল করত। তাই নদীর তীরে তীরে গড়ে উঠেছিল হাট-বাজার, বন্দর। আগে আমরা এই বাঙ্গালী নদীপথেই নৌকাযোগে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, রংপুরের মহিমাগঞ্জ, পাবনার চান্দাইকোনা, নাকালিয়া-বেড়া ও কাশিনাথপুর মোকামে মালামাল আনা-নেওয়া করতাম। এখন সেগুলো শুধুই অতীত। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মত্স্য সম্পদেরও আকাল দেখা দিয়েছে। তাইতো নদী পাড়ের জেলে পরিবারগুলো এখন দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
সারিয়াকান্দির বাঙ্গালী পাড়ের হিদুকান্দি গ্রামের কোনা বর্মণ, সুটকা হাওয়ালদার, বুদে বর্মণ ও চেনারু জানান, আগে আমরা এই বাঙ্গালী নদীতেই মাছ ধরে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করতাম। এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। তাই আমাদের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। অনেকে জীবনের তাগিদে বাব-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার হচ্ছে বেশি। নদী নাব্য থাকলে সহজেই এবং স্বল্প ব্যয়ে সেচ কাজ চলতো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, বাঙ্গালী নদী খননে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নদী আবার আগের মতো প্রাণ প্রবাহ ফিরে পাবে।