শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শেরপুরে দেশি মুরগির খামারে স্বাবলম্বী তিন শতাধিক মানুষ

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৪

জাকারিয়া হোসেন। শিক্ষিত যুবক। শিক্ষাজীবন শেষে দীর্ঘদিন চেষ্টা-তদবির করেও চাকরি জোটাতে পারেননি। এজন্য অনেক ভর্ত্সনা শুনেন। একপর্যায়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন উচ্চশিক্ষিত এই যুবক। তবে এসব এখন অনেক পুরনো কথা। কারণ বর্তমানে জাকারিয়া একজন সফল খামারি। তিনি স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শে অভাব ও বেকারত্ব ঘুচাতে জীবনযুদ্ধে বেছে নিয়েছেন দেশি মুরগি পালনকে। এজন্য যুক্ত হন ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি’ নামের একটি খামার সংঘে। শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ধড়মোকাম গ্রামস্থ বসতবাড়িতে গড়ে তুলেন ক্ষুদ্র পরিসরে বাণিজ্যিক দেশি মুরগির খামার। এমনকি অল্পদিনের মধ্যে সফলতাও আসতে শুরু করে তার খামারে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তার পরিবারেও আসে আর্থিক সচ্ছলতা। তাই মাত্র পঞ্চাশটি মুরগি নিয়ে শুরু করা খামারটিতে বর্তমানে আট শতাধিক দেশি মুরগি রয়েছে। বিগত চার বছরের ব্যবধানে ব্যবসার পরিধি বাড়ায় শূন্য থেকে লাখপতি বনে গেছেন হতাশ যুবক জাকারিয়া। কেবল জাকারিয়াই নয়, তার মতো এই উপজেলার তিন শতাধিক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী ভেটেরিনারি সার্জনের নিকট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি মুরগির (অর্গানিক) খামার গড়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব খামারের সঙ্গে  যুক্ত থেকে আরও পাঁচ হাজারেরও অধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। সরেজমিনে একাধিক খামার পরিদর্শনকালে কথা হয় সুবর্ণা খাতুন নামের এক নারী খামারির সঙ্গে। তিনি বলেন, ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শে দেশি মুরগির খামার করে দিনের নাগাল পেয়েছি। পাশাপাশি হতাশাগ্রস্ত বেকার জীবন থেকে কর্ম পেয়েছি।

আব্দুস সালাম নামের আরেক খামারি বলেন, শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দেই। কিন্তু চাকরি নামক সোনার হরিণ পাইনি। এতে হতাশ হয়ে পড়ি। বোঝা হয়ে যাই পরিবারের। প্রতিনিয়তই নানা ভর্ত্সনা শুনে বিপদে পা বাড়াই। হাতে তুলে নেই মাদক। কিন্তু একদিন হঠাত্ ভেটেরিনারি সার্জনের সঙ্গে দেখা হয়। পরে তার পরামর্শে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসি। বসতবাড়িতে একটি দেশি মুরগির খামার গড়ে তুলি। খুবই অল্পদিনের মধ্যে খামারটি লাভজনক হয়ে উঠে।

এমনকি প্রতিমাসে এই খামার থেকে অর্ধলাখ টাকা আয় করছি। ফলে সংসারে সচ্ছলতা আসায় সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করছেন বলে জানান তিনি। অন্যদিকে এই জাতের মুরগির সংরক্ষণ ও বিস্তার ঘটলে দেশে নিরাপদ ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, আত্মসামাজিক উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, বিগত ২০১৫ সালে পৌরসভাসহ এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভিত্তিতে দেশি মুরগির খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। এই জাতের মুরগির (অরগানিক) খামারের উদ্যোক্তা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোঃ রায়হান। তার সার্বিক সহযোগিতায় দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এখানে গড়ে উঠে প্রায় তিন শতাধিক খামার। তাদের নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি’ নামের একটি সংগঠন। আর এই সংগঠনের মাধ্যমে চাকরি না পাওয়া শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশি মুরগির খামার গড়তে উদ্বুদ্ধ করছেন। ফলে সময়ের ব্যবধানে এ ধরনের খামার বাড়ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোঃ রায়হান জানান, এই সেক্টরটি সম্ভাবনাময়। স্বল্প বিনোয়োগে চাকরির বিকল্প কর্মসংস্থানের নতুন খাত হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। পাশাপাশি ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি’ সংঘের সামাজিক ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানির মতো সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত রেখে কর্মমুখী করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ জাতের মুরগির খামার বিস্তারের মাধ্যমে দেশে নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী শেখ বলেন, ভেটেরিনারি সার্জন রায়হান দক্ষ একজন কর্মকর্তা। তার বাণিজ্যিকভিত্তিক দেশি মুরগির খামার মডেল হিসেবে যেন সারাদেশে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে এ জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানান তিনি।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ওই কর্মকর্তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও সহযোগিতায় গড়ে উঠা বাণিজ্যিক দেশি মুরগির খামার ইতোমধ্যে লাভজনক হিসেবে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে।