বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেশের বিভিন্ন স্থানের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৭

দেশের বিভিন্ন স্থানের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। ইত্তেফাক সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরঃ

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): নাসিরনগরের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। শহীদ মিনার না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে ধারণাও স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, উপজেলায় ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক, একটি নিম্ন-মাধ্যমিক, ১৬টি মাধ্যমিক, দুটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দুটি কলেজ এবং ছয়টি আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র তিনটি কলেজ, ১০টি মাধ্যমিক ও ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এছাড়া বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীন মিনার নেই।

উপজেলার ভুবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সগির আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার না থাকায় নিজেরা তৈরি করে অথবা পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুবনা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কলাগাছ অথবা বাঁশের তৈরি একটি অস্থায়ী শহীদ মিনারে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উম্মে সালমা উপজেলায় ১২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকার কথা স্বীকার করে জানান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোনো আদেশ ও বরাদ্দ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে প্রতিটি স্কুলে একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণের চেষ্টা করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মাকসুদুর রহমান জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৩টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলে অবশ্যই বাকিগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল কবির বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

মহেশপুর (ঝিনাইদহ): মহেশপুরে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ২৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ৩৬টিতে।

মহেশপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। যে সকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সে সকল প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে নির্মাণের জন্য। এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট উপর মহলে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে।

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম): ফুলবাড়ীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভাষা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা থেকেই যাচ্ছে।

উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মজিবর রহমান বলেন, উপজেলার দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার থাকলে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। 

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুস ছালাম জানান, ইতোমধ্যেই যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য তালিকা করে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাছুমা আরেফিন জানান, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, আমরা খুব দ্রুত তালিকা করে শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে শিক্ষা অধিদপ্তরে তা পাঠাবো।

নন্দীগ্রাম (বগুড়া): নন্দীগ্রামের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা আশপাশের শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। অনেকে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে তাতে শ্রদ্ধা জানায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে তাতেও অযত্ন-অবহেলার ছাপ স্পষ্ট।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউসুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অদ্বৈত কুমার সাহা জানান, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তারা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বাঁশ ও মাটি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে পাঁচটিতে শহীদ মিনার রয়েছে। তবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো বাজেট না থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয় না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আখতার জানান, পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। আগামী বছর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।