শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কুষ্টিয়া পুলিশের মহতী উদ্যোগ

আইনি কেন্দ্রের সহায়তায় নারীরা ফিরে পাচ্ছেন হারানো সংসার

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:০২

মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় পুলিশের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সংসার থেকে বিতাড়িত অসহায় নারীরা ফিরে পাচ্ছেন হারানো স্বপ্নের স্বামী-সংসার। পুলিশ পরিচালিত আইন সহায়তা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে স্বামীর পরিবার থেকে ঠাঁই হারা নির্যাতিত এক ডজনের অধিক নারী তাদের স্বামী-সংসার ফিরে পেয়ে এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন জীবন গড়ার ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতিত অসহায় শিশু ও নারীদের আইনি সহায়তাসহ সকল সাপোর্ট দেওয়ার জন্য কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের নির্দেশে চলতি বছরের তিন নভেম্বর গঠিত হয় ‘প্রত্যয়ী’ নামকরণে আইন সহায়তা কেন্দ্র। দাম্পত্য কলহসহ নির্যাতিত ও স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত নারীদের অনেকেই এখন প্রতিকার পেতে দ্বারস্থ হচ্ছেন পুলিশ পরিচালিত ‘প্রত্যয়ী’ আইন সহায়তা কেন্দ্রে। স্বামী ও তার পরিবার থেকে চরম নিগৃহীত গৃহবধূ শাহানাজ পারভীন সীমা প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে লিখিত নোটিস পাঠিয়ে সীমার স্বামী আরিফুল আলম শুভ, শ্বশুর হাসানুজ্জামানসহ দুই পক্ষের অভিভাবকদের তলব করে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠকে তাদের চার/পাঁচ বছর বিরাজমান দাম্পত্য দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসন হয়। বৈঠকে অভিযুক্ত স্বামী আরিফুল আলম শুভ নিজের ভুল স্বীকার করে স্ত্রী সীমা ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়ে রুপন্তীকে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে মীমাংসাপত্রে অঙ্গীকার করেন। কুষ্টিয়া সদরে অবস্থিত স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত গৃহবধূ সীমা নয় বছর বয়সী প্রতিবন্ধী মেয়ে রুপন্তী মরিয়মকে নিয়ে গত দুই বছর আগে আশ্রয় গ্রহণ করেন পাবনা জেলায় তার পিত্রালয়ে। পুলিশের হস্তক্ষেপ ও আইনি সহায়তা পেয়ে গৃহবধূ শাহানাজ পারভীন সীমা সন্তোষ প্রকাশ করেন। অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে তিনি এখন জীবনের নতুন স্বপ্ন দেখছেন। নির্যাতিত নারীদের সেবা প্রদানে পুলিশের মহতী এ উদ্যোগকে তিনি  সাধুবাদ জানান।

গত তিন মাসে ‘প্রত্যয়ী’ আইন সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ দাখিলকারী ২০ জন নারীর মধ্যে ১৩ জনের দাম্পত্য কলহ আপোষ-মীমাংসা হওয়ায় তারা ফিরে পান হারানো সংসার ও স্বাভাবিক জীবন। এ ছাড়া আরো পাঁচটি অভিযোগ চলমান এবং দুইটি অভিযোগ আদালতে গড়িয়েছে।

এই আইন কেন্দ্রে প্রতিকারপ্রাপ্ত মিরপুর উপজেলার আবুরী গ্রামের জিন্নতুন আরা, একই উপজেলার পোড়াদহ গ্রামের বন্যা খাতুন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমারগাড়া গ্রামের রুশিয়া খাতুন, পশ্চিম গট্রিয়া গ্রামের শিউলী খাতুনসহ অন্যরা স্বামীর বাড়িতে ফিরতে পেরে নতুনভাবে জীবন-সংসার গড়তে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী। 

আইন সহায়তা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কুষ্টিয়ার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নুরানী ফেরদৌস দিশা জানান, নির্যাতিত নারীদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার পর তাদের প্রত্যেকের স্বামীসহ পরিবারের অভিযুক্ত অন্যান্যদের লিখিত নোটিস পাঠিয়ে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে প্রথমে দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে মীমাংসা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে মামলা রুজুসহ বাদীকে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা খরচে দেওয়া হয় আইনগত  সহায়তা।

পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত কুষ্টিয়ায় যোগদানের পর এ অঞ্চলের নির্যাতিত অসহায় নারী ও শিশুদের জন্য ‘প্রত্যয়ী’ নামকরণে আইনি সহায়তা কেন্দ্রটি চালু করেন। কুষ্টিয়ায় পুলিশ পরিচালিত এ আইন সহায়তা কেন্দ্রটি একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে এখানকার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।