শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ

আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:২২

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বহিতেছে। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হইবার পর এই বত্সর বাংলাদেশ  আরও অগ্রসর হইবে—এমন প্রত্যাশা অনেকেরই। এমনকি অর্থনীতি লইয়া গবেষণা করে এমন সংস্থাগুলিও বলিতেছে যে, আগামীতে বাংলাদেশ হইবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরামর্শ কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ’ (সিইবিআর) এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল’ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলিয়াছে, ২০১৯ সালে বৃহত্ অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান হইবে ৪১তম। আগামী বত্সরগুলির ক্রম প্রক্ষেপণ দেখিলে ইহা অবলীলায় বলা যায় যে, সময় এখন বাংলাদেশের। দ্রুত বর্ধনশীল এই অর্থনীতির দেশটি ২০২৩ সাল নাগাদ ৩৬তম অবস্থান দখল করিতে পারে। আর ২০২৮ সাল নাগাদ ২৭তম অবস্থানে এবং ২০৩৩ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হইতে পারে বিশ্বের ২৪তম অর্থনীতির দেশ। বিগত দশ বছরের নীতির ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন প্রকল্পে মনোযোগ এবং বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াইবার যেইসব পদক্ষেপ গৃহীত হইয়াছে, তাহার সুফল পাওয়া যাইতেছে। মেগাপ্রকল্পগুলি শেষ হইলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিও বাড়িয়া যাইবে।

বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি লইয়া আশাবাদী হইবার অনেক কারণ রহিয়াছে। দেশটির আমদানি, রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উত্স রেমিটেন্স আহরণের পরিমাণ বেশ বাড়িয়াছে। অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান ও উত্পাদনমুখী খাতের প্রবৃদ্ধিও অন্যতম নিয়ামক হিসাবে কাজ করিতেছে। রাজনীতিতে স্থিরতা এবং নীতির ধারাবাহিকতা বিনিয়োগ আকর্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিতেছে। বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরাও যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ করিয়াছেন। ফলে, অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য অব্যাহত রহিয়াছে। এমন অবস্থায় সম্ভাব্য বিশ্বমন্দায়ও বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা ক্ষীণ। অতীতেও দেখা গিয়াছে যে, মন্দার রেশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব একটা লাগেনি। এখনো বৃহত্ দুই অর্থনৈতিক শক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলা বাণিজ্যযুদ্ধও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক হয় নাই। বরং কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক হইয়া দেখা দিয়াছে। বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের হিস্যা বাড়িতেছে। শুধু একটি পণ্য তৈরি পোশাক খাতেই ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যে আগাইয়া যাইতেছে দেশটি। অন্যান্য পণ্যেরও চাহিদা এবং নতুন বাজার সৃষ্টি সন্তোষজনক। তবে ইহাও বিবেচনায় রাখিতে হইবে যে, চীন কোন কোন পণ্যখাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী। দেশটি বিকল্প বাজারের দিকে ধাবিত হইতে পারে। তাহাতে মূল্য ও পণ্যের মানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা তীব্র হইবে। বাড়িয়া যাইবে ব্যবসার খরচও। সেদিকেও সরকারের পাশাপাশি পণ্য উত্পাদকদেরও খেয়াল রাখিতে হইবে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ চলিলেও প্রযুক্তি বিশ্বে দুই দেশই সমানতালে অগ্রসর হইতেছে। বিশ্বের শীর্ষ ২০ প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যে ১১টি মার্কিন এবং ৯টি চীনা কোম্পানি। ফলে, বাণিজ্য যুদ্ধ তথা শুল্কারোপ ও পাল্টা পদক্ষেপের ফলে স্থিতিশীল বাণিজ্য-ব্যবস্থা নষ্ট হইবে এবং ইহা স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে বলিয়া যে ধারণা ছিল—তাহা আর কেহই ভাবিতেছে না। যদিও শুরুতে মরগান স্ট্যানলির এক গবেষণায় বলা হইয়াছে, মার্কিন শুল্কের ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ এবং বৈশ্বিক মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ১ শতাংশের মতো প্রভাব পড়িবে। সেই প্রভাবের শিকার হইবে গোটা বিশ্ব। বাণিজ্যের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকিবার কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ইতোমধ্যে পূর্বাভাস দিয়াছে যে, বিশ্ব প্রবৃদ্ধির হারও কমিয়া যাইবে। তাহার মানে, কর্মসংস্থানও কমিয়া যাইবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইহা ব্যতিক্রম যে, ক্ষতিকর প্রভাবতো নয়ই বরং বাংলাদেশ লাভবান হইয়াছে। এই বত্সরও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়িবে বলিয়া আশা করা যায়।

তবে কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধির উত্পাদনমুখী খাতের বিদ্যমান সংকট দূর করিতে হইবে। জ্বালানি সংকট, উচ্চসুদ হারে লাগাম টানিয়া ধরা এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে শিল্পে অর্থজোগান সুলভ করিতে হইবে। চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করিবার পাশাপাশি নূতন করিয়া শপথ নেওয়া বর্তমান সরকার এইসব বিষয়ে অধিক মনোযোগী হইবে—এমনটিই প্রত্যাশা সর্বমহলের।