শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ট্রাফিক শৃঙ্খলা কর্মসূচি ও আমাদের মানসিকতা

আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:২১

ট্রাফিক আইন কতটুকু অনুসৃত হইতেছে, তাহা দিয়া আমাদের মানসিকতার পরিমাপ করা যাইতে পারে। সেই বিবেচনায় জাতি হিসাবে আমরা বিশৃঙ্খল ও স্বার্থপর—তাহা নিত্যদিন প্রমাণিত হইতেছে। আমরা যেমন একটি সৃশৃঙ্খল ট্রাফিক-ব্যবস্থাপনা গড়িয়া তুলিতে পারি নাই, তেমনই জনমনে ট্রাফিক আইন মান্য করিবার প্রবণতাও গড়িয়া উঠে নাই। অধিক জনগণের এবং অধিক যানবাহনের একটি দেশে সুশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়িয়া তোলা সহজ নহে, আবার একেবারে অসম্ভবও নহে। পৃথিবীর সকল মেগাসিটিতেই প্রচুর মানুষ বাস করে ও প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু তাহারা সকলেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কিছুমাত্রায় শৃঙ্খলা স্থাপনে সক্ষম হইয়াছে, অন্তত আমাদের তুলনায়। এই প্রেক্ষাপটে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলা আনিতে মঙ্গলবার হইতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিচালনা করিবে। মহানগর পুলিশ মনে করিতেছে, ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ ও ট্রাফিক সচেতনতা মাস পালনের মাধ্যমে ট্রাফিক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে ঢাকা শহরের ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নতি হইতেছে।

তবে ট্রাফিক আইন না মানিবার সংস্কৃতি এবং ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে অপর্যাপ্ত ট্রাফিক প্রকৌশল ও অন্যান্য সমস্যার কারণে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা রাতারাতি সমাধান সম্ভব হইতেছে না। বর্তমানে গৃহীত ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রমে ১৩টি কর্মসূচি পালিত হইবে। ইহার মধ্যে যেমন সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম রহিয়াছে, তেমনই রহিয়াছে স্বেচ্ছাসেবক বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে শাস্তি নিশ্চিতকরণ, চেকপোস্ট কার্যক্রম জোরদার করা, ভিডিও মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি। ট্রাফিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি ও শাস্তিপ্রদান নিশ্চিত করিতে পারিলে নিশ্চয়ই ট্রাফিকশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাইবে। পাশাপাশি চালক ও পথচারী, সর্বোপরি জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি খুবই প্রয়োজন। চালকরা যেমন যত্রতত্র গাড়ি থামাইয়া ফেলে তেমনই পথচারীরাও সিগন্যালের তোয়াক্কা না করিয়া রাস্তা পারাপার করিতে চাহে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনও ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার জন্য অনেকখানি দায়ী। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখিতে হইবে, জাতীয় সংস্কৃতিতে শৃঙ্খলাবোধ আপনাআপনি আসে না। আমাদের জনগণের বিশৃঙ্খল মনোভাব গড়িয়া উঠিবার পূর্বে তাহাদের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ হইতে হইবে। তাহাদের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা নিশ্চিত হইতে হইবে।

দেশ ধীরে ধীরে আগাইয়া যাইতেছে, মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাইতেছে, এখন প্রয়োজন সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করা। তবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও আন্দোলন চালাইয়া যাইতে হইবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কিছু কার্যকারিতা দৃশ্যমান হইতেছে। সরকার ও নীতিনির্ধারকরা সহনীয় মাত্রায় শৃঙ্খলাবদ্ধ একটি ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিবেন এবং অমান্যকারীদের শাস্তির বিধান করিয়া জনগণকেও সৃশৃঙ্খল করিয়া তুলিবেন—ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।