শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খেয়ালখুশির নির্মাণকাজে স্বচ্ছতা আবশ্যক

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:১৫

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়া সরকারি বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির খবর প্রায়শই দেখিতে পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন অবস্থায় কিংবা উদ্বোধনের অল্প কিছুদিন পর তাহা ধসিয়া পড়িবার ঘটনাও ঘটে। সমপ্রতি দুর্নীতির ভারে ধসিয়া পড়িয়াছে নির্মাণাধীন কুষ্টিয়া মেডিক্যালের ছাদ। গত বৃহস্পতিবারের এই ঘটনায় নিহত হইয়াছেন এক শ্রমিক, আহত আরো ৪ জন।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ২০১৩ সালে ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় নাই। তাহার কারণ উদ্ঘাটনে গত বত্সর মাঠপর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়াছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তত্কালীন পরিচালকের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। তাহাদের পরিদর্শনের ভিত্তিতে রচিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা একনেকে অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করিয়া নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ভবন নির্মাণ করিতেছে। একই সঙ্গে দর বাড়াইয়া কার্যাদেশ নেওয়া হইয়াছে। সবগুলি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেই নকশা পরিবর্তনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলিয়াছিল আইএমইডি। এই সকল অনিয়মের অভিযোগ উঠায় মাঝখানে কিছু সময় বরাদ্দ বন্ধ থাকিলেও গত বৃহস্পতিবার যে ভবনটি ধসিয়া পড়িয়াছে, সেই ভবন নির্মাণেও অনিয়ম খুঁজিয়া পায় আইএমইডি। হাসপাতাল ভবনের এক লক্ষ ৫৫ হাজার বর্গফুট ভিত্তির পরিবর্তে করা হইয়াছে এক লক্ষ ৩৮ হাজার বর্গফুট। গত বৃহস্পতিবার এই ভবনের তৃতীয় তলার নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানাইয়াছে যে, নির্মাণাধীন মূল ভবনের তৃতীয় তলার ৫০ ফুট বাই ৩০ ফুট ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলিতেছিল। ছাদটি মাটি হইতে প্রায় ৩০ ফুট ওপরে। ঢালাইয়ের সময় নিচে স্টিলের পাইপের পরিবর্তে শাটারিং দেওয়া হইয়াছিল বাঁশের খুঁটি দিয়া। অধিক উচ্চতার কারণে ঢালাইয়ের ভার সহিতে না পারিয়া বাঁশসমেত ধসিয়া পড়ে নির্মাণাধীন ছাদ।

গত কয়েক বত্সর ধরিয়া সারা দেশে সরকারি ভবন তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণকাজে নানাবিধ অনিয়মের খবর প্রকাশিত হইয়া আসিতেছে। ইস্পাতের রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের প্রথম ঘটনাটি উন্মোচিত হয় চুয়াডাঙ্গা জেলায়। ইহার পর গাইবান্ধায় মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণকাজেও ইস্পাতের রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের খবর আসে গণমাধ্যমে। পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের বিন্যাডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের দুইটি কক্ষের দরজার ওপরের ঢালাই ভাঙিয়া বাঁশের লাঠি বাহির হইয়া আসে। এমন ধরনের অনিয়মের খবর অনেক রহিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, সকল সরকারের আমলেই কমবেশি এই ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হইয়াছে। ঠিকাদাররা ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির নেতার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় এবং তাহাদের সহিত সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ থাকায় এই ধরনের পুকুরচুরির ঘটনা ঘটিবার সুযোগ পায়। যাহারা দুর্নীতি করেন, তাহাদের অনেক ক্ষেত্রেই বিচারের আওতায় আনিবার পরিবর্তে সুরক্ষা দেওয়া হয়। ইহা যেমন দুঃখজনক, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত খারাপ নজির তৈরি করে। উন্নয়নমূলক কাজ যাহারাই করুন না কেন, এইক্ষেত্রে নজরদারি বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই।