বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাজবাড়ীর একমাত্র শিশু হাসপাতালটি সচল হউক

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:২৫

বিশ্বাস করিতে কষ্ট হয় যে, আমরা যখন নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করিতেছি, তখন কেবল অর্থ ও চিকিত্সকের অভাবে দীর্ঘ ১৫ মাস যাবত্ বন্ধ অবস্থায় পড়িয়া আছে রাজবাড়ীর একমাত্র শিশু হাসপাতালটি। অথচ হাতের নাগালে শিশু স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে স্বস্তি আনিয়া দিয়াছিল এই হাসপাতাল। কারণ দুই দশকেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এই পৌর হাসপাতালটিতে নামমাত্র খরচে ভালো মানের সেবা পাওয়া যাইত। ফলে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ব্যাপক চাহিদাও রহিয়াছে হাসপাতালটির। শুধু তাহাই নহে, এখনো প্রায় অক্ষত আছে শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের উপযোগী একটি অবকাঠামোও। রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্রের বরাত দিয়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য হইতে জানা যায়, একজন এমবিবিএস চিকিত্সক ও দুই সহযোগীর তত্ত্বাবধানে শিশু হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হইত। চিকিত্সক ও সহযোগীদের বেতনসহ ইহার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা হইত পৌরসভার তহবিল হইতেই। কিন্তু একপর্যায়ে অর্থাভাবে বেতন অনিয়মিত হইয়া গেলে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিত্সক স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সঙ্গে বন্ধ হইয়া যায় হাসপাতালটির কার্যক্রমও। আরও লজ্জাকর বিষয় হইল, গত ১৫ মাসেও হাসপাতালটি সচল হয় নাই।

জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাইয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারক মহলের সর্বোচ্চ সদিচ্ছার বিষয়টি সুবিদিত। সেইসঙ্গে রহিয়াছে দাতাদের সহায়তাপুষ্ট এনজিওদের বিশাল নেটওয়ার্কও। এমনকী আমাদের প্রাইভেট বা ব্যক্তিখাতের সামর্থ্যও খাটো করিয়া দেখিবার মতো নহে। তাহা সত্ত্বেও যত্সামান্য অর্থের অভাবে অতি প্রয়োজনীয় একটি হাসপাতাল কীভাবে বন্ধ হইয়া যায়— তাহা আমাদের বোধগম্য নহে। বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ তাহাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিয়াছেন কিনা সেই প্রশ্নও তোলা যায়। ফলে যাহা হইবার তাহাই হইতেছে। সেবাপ্রার্থী জনগণ যেমন জরুরি চিকিত্সা সেবা হইতে বঞ্চিত হইতেছেন, তেমনি ধূলি জমিতেছে আসবাবপত্রে। আবর্জনা গ্রাস করিয়া লইতেছে হাসপাতাল চত্বর। গত ২২ বত্সরে বাংলাদেশ যেখানে বলিতে গেলে আমূল বদলাইয়া গিয়াছে, সেখানে রাজবাড়ী জেলার একমাত্র শিশু হাসপাতালটির এই উল্টোযাত্রা বাস্তবিকই মানিয়া লওয়া কঠিন। সত্য বটে, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ১৫ শয্যার একটি শিশু ওয়ার্ড আছে। সেখানে সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু সাড়ে নয় লক্ষ জনসংখ্যার বর্ধনশীল একটি জেলাশহরে ইহা যে কতটা অপ্রতুল তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র এবং জেলা সিভিল সার্জনও হাসপাতালটির প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করিয়াছেন। সেই সঙ্গে নিজেদের অপারগতার কথাও বলিয়াছেন অকপটে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সংশ্লিষ্ট সকলের সদিচ্ছা থাকিলে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ উদ্যোগী হইলে হাসপাতালটি সচল করিবার পাশাপাশি ইহাকে উন্নতমানের একটি শিশু হাসপাতালে পরিণত করাও কঠিন কোনো বিষয় নহে। আপাতত আমরা চাই অনতিবিলম্বে হাসপাতালটি সচল হউক। শিশুরা জরুরি সেবা পাক। স্বস্তি ফিরিয়া আসুক ভুক্তভোগীদের মনে।