শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিআরটিসি বাসের রক্ষণাবেক্ষণ

আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:০৪

বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন বা বিআরটিসি। স্বল্প খরচে গণপরিবহনের প্রধান ভরসা এই সংস্থাটির বাস। কিন্তু শুধু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই সংস্থার অনেক বাস পড়িয়া রহিয়াছে অচল অবস্থায়। এই সংস্থার বিভিন্ন ধরনের বাসের সংখ্যা বর্তমানে এক হাজার ৪৪৫টি। তন্মধ্যে নষ্ট অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে ৫২৪টি বাস। কোনো কোনো বাস বিদেশ হইতে ক্রয় করিবার অল্প সময়ের মধ্যেই নষ্ট হইয়া গিয়াছে। ইহার প্রধান কারণ হইল এইসব গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক ওয়ার্কশপ নাই। দুইটি ওয়ার্কশপ থাকিলেও সেইগুলির গাড়ি মেরামতের সক্ষমতা নাই। নাই প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশের সরবরাহ ও পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান। এমনকি গাড়ি ধোয়ার জন্য নাই কোনো ওয়াশিং প্লান্ট। শুধু গাড়ি ক্রয় করিলেই হইবে না, ইহার স্থায়িত্বের জন্য চাই নিয়মিত সংরক্ষণ ও পরিচর্যা। গাড়ি ক্রয়ের সময় স্পেয়ার পার্টসের সহজলভ্যতার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। কিন্তু এই ব্যাপারে নজর না দেওয়ায় বিআরটিসি এখন কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা দিতে পারিতেছে না। অবহেলা ও অনিয়মের কারণে বর্তমানে ইহা পরিণত হইয়াছে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে। গত কয়েক বত্সরে অন্তত ২০টি রুটে এই সংস্থার বাস চলাচল বন্ধ হইয়া গিয়াছে। কোনো কোনো রুটে বাস চলাচল সীমিত করা হইয়াছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন্ধ হইবার উপক্রম হইয়াছে সংস্থাটির কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও। এই অবস্থায় বিআরটিসির বাসের সংরক্ষণ ও এই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বেসরকারি পরিবহন সংস্থার বেশিরভাগ বাস নিয়মিত মেরামতের কারণে ১৫-২০ বত্সর পরও রাস্তায় চলাচল করিতেছে। তাহলে সরকারি বাস কেন পাঁচ-ছয় বত্সরের মধ্যেই অচল হইয়া যাইবে? শুধু বিদেশ হইতে দামি দামি বাস কিনিলেই হইবে না প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও মেরামতের জন্য কারিগরি সক্ষমতাও বাড়াইতে হইবে। বাড়াইতে হইবে অর্থবরাদ্দও। বিআরটিসির দুইটি ওয়ার্কশপের মধ্যে কোনোটিতেই বাস মেরামতের সুযোগ নাই। বিশেষ করিয়া গাজীপুরে অবস্থিত সমন্বিত কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপটি দীর্ঘদিন ধরিয়া বন্ধ রহিয়াছে যাহা শীঘ্রই চালু করিবার দাবি রাখে। অন্যদিকে তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপে বিআরটিসির বাসের মেরামত কেন করা যাইবে না তাহা বোধগম্য নহে। আর্থিকসহ যেসব সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা রহিয়াছে তাহা দূর করিতে হইবে। বিআরটিসির বাস চলাচলের জন্য ১৯টি ডিপো বিদ্যমান। এইসব ডিপোতেও ছোট-খাট ত্রুটি মেরামতের সুবিধা থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজন শেড নির্মাণ ও নিয়মিত গাড়ি ধোয়া-মোছার ব্যবস্থা রাখা। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের কথাও নূতন করিয়া চিন্তা করিতে হইবে।

জানা মতে, ৫০টি ভলভো বাসের মধ্যে ৪৮টিই নষ্ট। ৫০টি আর্টিকুলেটেড বা জোড়াবাসের মধ্যে ২০টি অচল।  অন্যান্য সিঙ্গেল ডেকার ও ডাবল ডেকার বাসের অবস্থাও তথৈবচ। এই অবস্থা দিনের পর দিন চলিতে পারে না। অচল বাসগুলির অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি অবহেলায় পড়িয়া থাকিয়া নষ্ট হইয়া যাওয়াটা দুঃখজনক। অথচ এইসব বাস মেরামতের মাধ্যমে চলাচলের উপযোগী করিলে  দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। ইতোমধ্যে ভারত হইতে নূতন ৬০০ বাস আনিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে। সড়কে নূতন নূতন বাস নামাইবার পাশাপাশি পুরাতন বাসগুলিকেও চলাচল উপযোগী করিয়া গড়িয়া তুলিতে মনোনিবেশ করিতে হইবে। বন্ধ করিতে হইবে সরকারি অর্থের অপচয় ও অপব্যবহার।