বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইহা মোটেও সামান্য ঘটনা নহে

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:৪২

বালু ব্যবসায়ীদের হামলায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পি এম ইমরুল কায়েস আহত হইয়াছেন। শনিবার দুপুরে উপজেলার আলাইপুর হরিরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে তাঁহার উপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁহাকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী সরকারি কর্মকর্তা এই ব্যাপারে কোনো কথা বলিতে সম্মত না হইলেও বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাঁহার উপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করিয়াছেন। ওসি জানাইয়াছেন, পুলিশ ছাড়াই আলাইপুর হরিরামপুর এলাকার একটি বালুমহালে গিয়া কাগজপত্র দেখিতে চাহিয়াছিলেন তিনি। তখন বালুঘাটের লোকজন এসি ল্যান্ড ও তাঁহার গাড়িচালকের ওপর হামলা করেন। তাঁহাদের কিলঘুষি মারা হয়। ইহাতে এসি ল্যান্ড কপালে আঘাত পান। খবর পাইয়া পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটিয়া গেলেও তাত্ক্ষণিকভাবে জড়িতদের কাহাকেও আটক করিতে পারেন নাই। অবশ্য পুলিশের পক্ষ হইতে এই মর্মে আশ্বস্ত করা হইয়াছে যে, দায়ী ব্যক্তিদের আটক করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। খবরটি সংবাদপত্রে বিশদভাবে প্রকাশিত হইয়াছে। ঘটনাটি দৃশ্যত ছোট মনে হইলেও ইহা মোটেও সামান্য ঘটনা নহে। দ্রুত যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য দেখানো হইলে অনিবার্যভাবে ইহার অভিঘাতও সুদূরপ্রসারী হইতে বাধ্য। অতএব, এই ব্যাপারে কেবল উদ্বেগ প্রকাশই যথেষ্ট নহে।  

বুঝিতে হইবে যে, যাহার উপর হামলা হইয়াছে তিনি একজন ব্যক্তিমাত্র নহেন। আর যেই দায়িত্ব পালন করিতে গিয়া তিনি শারীরিকভাবে আক্রান্ত ও মানসিকভাবে অপমানিত হইয়াছেন—তাহাও তাঁহার ব্যক্তিগত কোনো বিষয় ছিল না। প্রসঙ্গত এখানে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজার সাক্ষ্য তুলিয়া ধরা যাইতে পারে। তিনি বলিয়াছেন যে তাঁহার নিকট অবৈধ বালু উত্তোলনের অনেক অভিযোগ আসিতেছিল। তিনিই সহকারী কমিশনারকে বিষয়টি সরেজমিনে দেখিতে বলিয়াছিলেন। সহকারী কমিশনার রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে তাঁহার উপর অর্পিত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করিতে গিয়াছিলেন। হামলাকারীরা কাহারা, তাহাদের ক্ষমতার উত্সই-বা কোথায়— আমরা জানি না। জানিতে চাহি না। আমরা কেবল এইটুকু বুঝি যে তাহারা রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনে বাধা দিয়াছে, হাত তুলিয়াছে একজন সরকারি কর্মকর্তার গায়ে— যাহা রাষ্ট্রের গায়ে হাত তুলিবার শামিল। এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচিত ছিল তত্ক্ষণাত্ রাষ্ট্রের হাতটিও সেইসকল দুর্বৃত্তদের দেখাইয়া দেওয়া এবং রাষ্ট্রের হাত কত লম্বা হইতে পারে তাহা কড়ায়গণ্ডায় বুঝাইয়া দেওয়া। প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গায়ে যখন হাত তোলা হয়, তখন তো আর ন্যায়-অন্যায় বিচারের অবকাশ থাকে না। এইরূপ ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রের আইনানুগ কর্তৃত্ব ও মর্যাদা রক্ষার্থে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা না হয়, তাহা হইলে বিশেষ করিয়া প্রশাসনের নিম্নপর্যায়ে তাহার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে বাধ্য। ইহা নিশ্চয় কাহারও কাম্য হইতে পারে না।