শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাদক চোরাকারবারিদের আত্মসমর্পণ

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৫৬

কক্সবাজার জেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফের একটি স্কুলমাঠে শনিবার জনসম্মুখে পুলিশের তালিকাভুক্ত ১০২ জন ইয়াবা চোরাকারবারি আত্মসমর্পণ করিয়াছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট মাদক ও অস্ত্র জমা দিয়া তাহারা আত্মসমর্পণ করেন। মন্ত্রী বলেন, মাদক ব্যবসায় জড়িতদের কোনোরূপ ছাড় দেওয়া হইবে না। ‘ইয়াবা গডফাদার’ তালিকায় যে ৭৩ জনের নাম রহিয়াছে তাহাদের মধ্যে ৩০ জন আত্মসমর্পণ করিয়াছে। তবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, কক্সবাজার জেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা পুলিশের কাছে রহিয়াছে তাহাতে ১১৫১ জনের নাম থাকিলেও আত্মসমর্পণ করিয়াছে মাত্র ১০২ জন। এই আত্মসমর্পণ নিয়া মানুষের মনে অনেক সন্দেহ-সংশয় ছিল, কিন্তু দীর্ঘদিন মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত শতাধিক মানুষকে এইভাবে অস্ত্র এবং ইয়াবাভর্তি ব্যাগ নিয়া আত্মসমর্পণ করিতে দেখিয়া অনেকেই আশ্বস্ত হইয়াছেন। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক, তবে ইহা লইয়া আত্মতুষ্টিতে ভুগিবার অবকাশ যে নাই তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দেশের মাদক পরিস্থিতি, বিশেষত ইয়াবার ক্রয়বিক্রয় এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। সমগ্র দেশে বিভিন্ন বাহিনীর চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন তিন হাজারের বেশি। সীমান্তের ৬০টি স্থান দিয়া মিয়ানমার হইতে অবৈধভাবে আসিতেছে এই ভয়ঙ্কর মাদকটি। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউএনওডিসির মতে, বাংলাদেশে উদ্ধারকৃত মাদকের পরিসংখ্যান অনুসারে বত্সরে কেবল ইয়াবা বড়িই বিক্রি হয় ৪০ কোটির বেশি, যাহার বাজারমূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। ইয়াবা বড়ির পিছনে মাদকসেবীদের বত্সরে যে খরচ, তাহা বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির বার্ষিক বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ, আর পুলিশের বাজেটের প্রায় অর্ধেক। সরকারিভাবেই বলা হয়, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা কমবেশি ৭০ লক্ষ। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের মনোভাব যে খুবই কঠোর তাহা স্পষ্ট। ‘পুলিশের ক্রসফায়ারে’ ইতোমধ্যে তিন শতাধিক মাদক চোরাচালানির মৃত্যু হইয়াছে। তন্মধ্যে ইয়াবা চোরাচালানের প্রধান রুট কক্সবাজারেই মারা গিয়াছে ৫৩ জন। ইয়াবা চোরাকারবারের সঙ্গে হাজার কোটি টাকার হিসাব জড়িত। ইহার শিকড়বাকড় সর্বব্যাপ্ত। মোটা দাগে সমাজ ও প্রশাসনও ইহার বাহিরে নহে।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের ইয়াবা চোরাকারবারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার সংবাদও নূতন নহে। রাজনীতির স্থানীয় পর্যায়ের হোমরাচোমরাদের অনেকেও ইয়াবা চোরাকারবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অতএব, দেশে-বিদেশে বিস্তৃত ইয়াবা সিন্ডিকেটের মূলোত্পাটন সহজ নহে। ফলে, বলিতেই হইবে, আত্মসমর্পণের এই উদ্যোগ সামাজিক সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি মাদক-কারবারিদেরকে কড়া সতর্কবার্তা প্রদান করিলেও নিশ্চিন্ত হইবার অবকাশ নাই বলিলেই চলে। আত্মসমর্পণের দিন তো বটেই, এখনও প্রতিদিনই ইয়াবা ধরা পড়িতেছে। তবে, ইয়াবা চোরাকারবারিদের জন্য সরকারের আত্মসমর্পণের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সরকার আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিবার যে সুযোগ সৃষ্টি করিয়াছে—মাদক চোরাকারবারিদের সেই সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। কারণ, প্রথমত, দেশের তরুণ সমাজের স্বার্থেই মাদকব্যবসায়ীদের প্রতি কোনোরূপ ছাড় দিবার সুযোগ নাই; দ্বিতীয়ত, আত্মসমর্পণ না করিলে পরিণতি কী হইবে তাহা তাহাদের অজানা থাকিবার কথা নহে। প্রশাসনের বার্তাও সুস্পষ্ট: যাহারা আত্মসমর্পণ করে নাই, তাহাদের পরিণতি হইবে ভয়াবহ। তাহাদের ধরিতে শিগগিরই সাঁড়াশি অভিযান শুরু হইবে। জনগণও, আত্মসমর্পণের পাশাপাশি, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপই দেখিতে চাহে।