বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এইবার ব্রেক্সিট বিপাকে লেবার পার্টি

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৬

ব্রেক্সিটের আগুনে আচমকাই যেন ভস্মীভূত হইতে শুরু করিয়াছে ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টি। এতদিন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে প্রকাশ্য বিদ্রোহের আগুন দেখা গেলেও, এইবার ব্রেক্সিট-বিপদ লেবার পার্টিকে ভালোভাবেই ঘিরিয়া ফেলিতেছে বলিয়া মনে হইতেছে। উল্লেখ্য, সোমবার একযোগে সাতজন এমপি লেবার পার্টি হইতে পদত্যাগ করিয়াছেন। পদত্যাগকারী এমপিরা সকলেই ব্রেক্সিট-বিরোধী। ব্রেক্সিট বিষয়ে দ্বিতীয় গণভোটের ডাক দিবার জন্য তাঁহারা করবিনের উপরে চাপ সৃস্টি করিতেছিলেন। পদত্যাগীরা লেবার পার্টি ছাড়িলেও তাঁহারা পার্লামেন্ট ছাড়িবেন না বলিয়া জানা গিয়াছে। বরং তাঁহারা পার্লামেন্টের ভিতরেই ব্রেক্সিট ইস্যুতে একটি ভিন্নধারা তৈরি করিতে সচেষ্ট হইবেন। সংবাদ-মাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, এই সাতজনের বাহিরে আরো বেশ কয়েকজন এমপি পদত্যাগের ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা করিতেছেন। দলের সহ-নেতা টনি ওয়াটসনের কথাবার্তা হইতেও একই ইঙ্গিত মিলিয়াছে। ১৯৮১ সালে চারজন এমপি বাহির হইয়া সোশ্যাল ডেমোক্রাটিক পার্টি গঠন করিবার পরে, লেবার পার্টিতে আর কখনো এত বড় পদত্যাগের ঘটনা ঘটে নাই।

লেবার পার্টিতে যাহা ঘটিয়াছে তাহা অনেকদিন ধরিয়াই অনিবার্য হইয়া উঠিতেছিল বলিয়া লেবারপন্থি বিশ্লেষকেরা মনে করিতেছেন। বস্তুত ব্রেক্সিট গণভোটের ফল ও ইউরোপ প্রসঙ্গে লেবার পার্টির ঐতিহাসিক অবস্থানের মধ্যে কখনোই ভারসাম্য আনিতে সক্ষম হন নাই করবিন। কেননা, সরাসরি ব্রেক্সিটের বিপক্ষে যাওয়ার অর্থ হইতেছে ব্রেক্সিট গণভোটের বিপক্ষে অবস্থান লওয়া। ভোটের কথা স্মরণে রাখিতে হয় বিধায় করবিন কখনো সেই পথে হাঁটিতে পারেন নাই। ফলে ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে করবিনকে সর্বদাই একধরনের ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থানে থাকিতে হইতেছে। আবার ইউরোপপন্থি একটি দলের নেতা হিসাবে করবিনের এহেন অবস্থান মানিয়া লইতে পারিতেছেন না লেবার পার্টির সনাতনপন্থিরা। মজার বিষয় এই যে, নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকালে টনি ব্লেয়ারের নির্মিত ‘নিউ-লেবার’ পরিচয় হইতে লেবার পার্টিকে টানিয়া বাহির করিয়া আনিয়া দলের ঐতিহাসিক মূল্যবোধগুলির সহিত পুনরায় সংযুক্ত করিবার অঙ্গীকার করিয়াছিলেন করবিন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ সেই করবিনকেই রাজনৈতিক সুবিধাবাদের জন্য সমালোচনা করিতেছেন দলের সনাতনপন্থিরা। সোমবারের পদত্যাগের ঘটনার পরে উভয় পক্ষের মধ্যে কঠিন শব্দের বিনিময় দেখিয়া বিভেদের মাত্রা কিছুটা হইলেও টের পাওয়া যাইতেছে।

লেবার পার্টির গৃহযুদ্ধে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি—বিশেষ করিয়া প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে যে সবিশেষ খুশি হইবেন তাহা বলাই বাহুল্য। এতদিন ধরিয়া ব্রেক্সিট লইয়া তালগোল পাকাইবার অভিযোগে হাউস অফ কমন্সে প্রধানমন্ত্রীকে তুলাধুনা করিয়াছেন করবিন। এইবার নিজ দলের মধ্যে প্রকাশ্য বিদ্রোহের পরে করবিন কেমন করিয়া পরিস্থিতি সামাল দেন তাহাই দেখিবার বিষয়। ব্রেক্সিটের ভূত ব্রিটিশদের সহজে ছাড়িবে বলিয়া মনে হইতেছে না।