বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের এই উদাসীনতা কেন?

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৯, ২১:৩৯

আমাদের দেশে নির্বাচন মানেই উত্সব। আর স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন হইলে তো কথাই নাই। ভোটারদের অংশগ্রহণের হার একলাফে ১০ শতাংশ বাড়িয়া যায়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মানুষকেও স্বজনের কাঁধে চড়িয়া বিপুল উত্সাহে ভোটাধিকার প্রয়োগ করিতে দেখা যায়। ঝড়-বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ভোটকেন্দ্রের চারিপাশে মনুষ্যসৃষ্ট বিশৃঙ্খলা ও মারামারির ঘটনাও মানুষকে ভোটদানে বিরত করিতে পারে না। ঐতিহ্যগতভাবে এই ধারা চলিয়া আসিতেছে। কিন্তু চলমান পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে এই ক্ষেত্রে যে দৃশ্যমান ব্যত্যয় ঘটিয়াছে—খোদ নির্বাচন কমিশনও তাহা অস্বীকার করিতে পারেন নাই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ৪৮৭টি উপজেলায় পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে সারাদেশে ৬৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হইয়াছে গত ১০ মার্চ। এই ধাপের জন্য নির্বাচন কমিশন ৮৭টি উপজেলায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করিলেও ১১টি উপজেলায় প্রার্থীরা বিজয়ী হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ভোটারদের অংশগ্রহণের হারও আশানুরূপ ছিল না। ব্যতিক্রম নহে গতকাল সোমবার দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ১২৯টি উপজেলা নির্বাচনের চিত্রও। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান—এই তিনটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইতেছে। অথচ সামগ্রিকভাবে নিরুত্তাপ পরিবেশ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। তিনটি পদ মিলাইয়া এই সংখ্যা ৪৮। সবকিছুকে ছাপাইয়া উঠিয়াছে নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের উদাসীনতা—যাহা নিকট অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নহে।

প্রশ্ন হইল, নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের এই উদাসীনতা কেন? ইহার উত্তরে নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা বড় বড় কথা বলিতেছেন। দেখাইতেছেন নানা অজুহাত। কিন্তু বাস্তবে মাঠপর্যায়ে কী হইতেছে—সেই বিষয়ে টুঁ শব্দটিও করিতেছেন না কেহ। উচ্চপর্যায়ে যাহারা বসিয়া আছেন—সকলেই ভালো ভালো কথা বলেন, কিন্তু মাঠপর্যায়ে তাহার কোনো প্রকার প্রভাব বা প্রতিফলন দৃশ্যমান নহে। একজন প্রার্থী তাহার নির্বাচনী এলাকায় যাইবার পথে মোটরসাইকেল আরোহীরা প্রকাশ্যে তাহাকে ঘেরাও করিয়া রাখিতেছে। প্রদর্শন করিতেছে ভয়ভীতি। এই ধরনের বাড়াবাড়ির দৃষ্টান্ত তো ভূরি ভূরি। কিন্তু কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা তাহা জানিবেন না কেন? এই কথাও কি আমাদের বিশ্বাস করিতে হইবে যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া মাঠপর্যায়ে যাহা হইয়াছে কিংবা হইতেছে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অজান্তেই তাহা ঘটিতেছে? অথচ যাহারা এই ধরনের বাড়াবাড়ি, জোর-জবরদস্তি ও অনিয়মের সহিত জড়িত—তাহাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করা হইতেছে না কিংবা স্পর্শ করার সাহসটুকুও নাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এই রকম অবস্থা যদি চলিতে থাকে তাহা হইলে ভবিষ্যতে হয়ত আর নির্বাচনেরই প্রয়োজন পড়িবে না। নির্বাচনের প্রতি জনগণের যে উদাসীনতা দেখা যাইতেছে— ইহা সম্ভবত তাহারই পূর্বাভাস মাত্র। আপাতত বলিবার কথা কেবল এইটুকু যে, নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থায় যাহাতে বিন্দুমাত্র চিড় না ধরে তাহা অবশ্যই নিশ্চিত করিতে হইবে। অন্যথায় ইহার পরিণতি ভালো হইতে পারে না।