বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৪১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপর সর্বপ্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আইনানুগভাবে নিষিদ্ধ। ২০১১ সালে জনস্বার্থে দায়ের করা এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিলেন। ইহার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করিয়া সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আদালতের নির্দেশ মানিয়া চলার জন্য বলিয়াছিল। শুধু তাহাই নহে, নীতিনির্ধারক মহলের পক্ষ হইতে শিক্ষকদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পরিষদকেও এই ব্যাপারে সতর্ক করা হয় উপর্যুপরি। কিন্তু তাহা যে পুরোপুরি ফলপ্রসূ হয় নাই—ভিকারুননিসায় সম্প্রতি ঘটিয়া যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাটিই তাহার একমাত্র উদাহরণ নহে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য বলিতেছে, চলতি বত্সরের জানুয়ারি হইতে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১১ মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতনের শিকার হইয়াছে দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী। তন্মধ্যে নির্যাতনজনিত আত্মহত্যার ঘটনাও রহিয়াছে একাধিক। জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করিয়াছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। কোন প্রেক্ষাপটে— কতটা অপমানিত হইয়া— অরিত্রী অধিকারী নামের রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির কিশোরী শিক্ষার্থীটিকে আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর পথ বাছিয়া লইতে হইয়াছিল তাহা ইতোমধ্যে দেশবাসীর জানা হইয়া গিয়াছে। প্রশ্ন হইল, শিক্ষক কেন তাহার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীকে অপমান করিবেন? স্পষ্টতই ইহা সীমালঙ্ঘন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে প্রকৃত পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবল সেই বাচ্চা মেয়েটিকে অপমান করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, তাহার উপস্থিতিতে তাহার অভিভাবককেও অপমান করা হয়— যাহা দুর্ভাগ্যজনক বলিলে কমই বলা হয়।

শিক্ষক অবশ্যই শিক্ষার্থীদের শাসন করিবেন। কিন্তু যেই শাসনের মধ্যে ভালোবাসা নাই— মমত্ববোধ নাই— সেই শাসন যে গলার ফাঁসের চাইতে কোনো অংশে কম ভয়াবহ নহে—অরিত্রীকে জীবন দিয়া তাহা প্রমাণ করিতে হইল! বাস্তবিকই এই ক্ষতি মানিয়া লওয়া কঠিন। পৃথিবীর কোনো আইনই শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতাকে সমর্থন করে না। অতএব, এই বিষয়ে বিশদ বলা অনাবশ্যক। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল—বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধতা। সমাজে ও রাষ্ট্রে শিক্ষকের স্থান কোথায় এবং কী তাহার দায়িত্ব ও কর্তব্য— তাহা নূতন করিয়া ব্যাখ্যার অবকাশ নাই। শিক্ষককে যে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়—শিক্ষার্থীর প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসাই যদি না থাকে তাহা হইলে তিনি মানুষ গড়িবেন কীভাবে? ভালোবাসা ছাড়া কি মানুষ হয়? শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি সত্ত্বেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের ভূমিকা লইয়া খোদ নীতিনির্ধারক মহলেও যে হতাশার সুর মাঝেমধ্যেই উচ্চকিত হইয়া উঠিতে দেখা যায়—তাহাকে ভিত্তিহীন বলিয়া উড়াইয়া দেওয়ার অবকাশ কোথায়? আয়নায় নির্মোহভাবে নিজের মুখ দেখিবার সময় আসিয়াছে। সংশ্লিষ্ট সকলে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটিলে উত্তম। তবে এই আশায় নীতিনির্ধারকদের বসিয়া থাকিবার সুযোগ নাই। শুধু ভালো ভালো আইন ও নিয়মনীতি করিলেই চলিবে না, তাহার বাস্তবায়নও নিশ্চিত করিতে হইবে। প্রয়োজনে অবশ্যই কঠোর হইতে হইবে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে কেন সীমা লঙ্ঘিত হইতেছে— সেই কারণ বা কারণসমূহ চিহ্নিত করিয়া তাহার পুনরাবৃত্তি রোধে গ্রহণ করিতে হইবে যথোচিত ব্যবস্থা।