শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ম্যাড কাউ লইয়া দুশ্চিন্তা রহিয়াছে এখনো

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৪১

প্রায় দুই দশক আগে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশে বিপজ্জনক ‘ম্যাড কাউ’ রোগ লইয়া ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হইয়াছিল। প্রাণিজ মাংস ও হাড়ের গুঁড়া দিয়া বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি পশুখাদ্য হইতে প্রথমে পশুতে এবং পরবর্তীসময়ে মানুষের শরীরে এই ‘ম্যাড কাউ’ রোগ ছড়াইয়া থাকে। যদিও এখন অবধি বাংলাদেশে ম্যাড কাউ রোগ শনাক্ত হয় নাই, তবে একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, এই রোগের ঝুঁকি হইতে বাংলাদেশ মুক্ত নহে। কারণ ফার্মের মুরগির যেই খাবার তৈরি হয় সেইখানে ব্যবহার করা হইতেছে মিট অ্যান্ড বোন মিল (এমবিএম)।

প্রাণিজ মাংস ও হাড়ের গুঁড়া দিয়া তৈরি হয় এই এমবিএম, যাহা প্রোটিনের বড় উত্স এবং ইহা শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইহাই আবার ‘ম্যাড কাউ’ ডিজিজ (বিএসই) এবং প্রিয়ন ডিজিজের (টিএসই) অন্যতম বাহক ও কারণ। সেইক্ষেত্রে পশুর মাধ্যমে এই রোগ ছড়াইতে পারে মানুষের দেহেও। মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড এবং নার্ভাস সিস্টেমকে ধ্বংস করিয়া দেয় এই রোগ। ম্যাড কাউ রোগটির ইতিহাসের ব্যাপারে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে প্রথম ইংল্যান্ডে গরুর মধ্যে এই রোগটি ধরা পড়ে। আর মানুষের শরীরে রোগটি ধরা পড়ে ১৯৯৭ সালে। ২০০০ সালে ইউরোপ ও আমেরিকায়, পরে জাপানেও এই রোগ ছড়াইয়ে পড়ে গরু ও মানুষের শরীরে। সেই সময় ওইসকল দেশে বাণিজ্যিকভাবে পালন করা বিপুলসংখ্যক পশু-পাখি ধ্বংস করা হইয়াছিল। কারণ এই রোগ ছড়াইয়া পড়িবার প্রধান কারণ ছিল মিট অ্যান্ড বোন মিল তথা এমবিএম। সেই সময় হইতে বিভিন্ন উন্নত দেশও এমবিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। বাংলাদেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হইতে বিপুল পরিমাণ এমবিএম খাদ্য আমদানি করা হইত। দেশে প্রায় ৩০টির মতো প্রতিষ্ঠান নানা প্রাণিজ মাংস ও হাড় ব্যবহার করিয়া ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল’ তৈরি করিয়া তাহা বিদেশে রপ্তানি করিত। ফলে ঝুঁকি হইতে রক্ষায় ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর এনিম্যাল হেলথ বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশকে এমবিএমের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত করে। কিন্তু দেশের কোনো পশুখাদ্যে এমবিএমের ক্ষতিকর কোনো প্রভাব আছে কি না, তাহা যাচাই করিয়া দেখা হয় নাই। তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে এই রোগটির সূত্রপাত ঘটিবার যে আশঙ্কা রহিয়াছে, তাহার কারণ হিসাবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পশুখাদ্য হইতে পশুর মাধ্যমে এই রোগ মানুষের শরীরে ছড়াইবার ঝুঁকি সবসময়ই থাকিয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের আমদানি নীতিতে এমবিএম আমদানির সুযোগ রহিয়াছে। সেই কারণে বাংলাদেশে ইহা আমদানি বৈধ। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি হইতে জানা যায়, ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন এমবিএম আমদানি করা হইয়াছে। 

এমবিএম প্রোটিনের বড় উত্স বটে। তবে এমবিএম-এর মাধ্যমে ‘ম্যাড কাউ’ ডিজিজ, সালমোনেলার মতো জীবাণু সহজেই ছড়াইয়া পড়িতে পারে বিধায় উন্নত বিশ্বের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া আমাদেরও প্রোটিনের উত্স হিসাবে ‘এমবিএম’ হইতে বাহির হইয়া আসিতে হইবে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর এনিম্যাল হেলথের (ওআইই) তালিকায় বাংলাদেশ এখনো কালো তালিকাভুক্ত। সেইখান হইতেও বাহির হইয়া আসিতে হইবে। আর এমবিএমের বিকল্প হিসাবে ফিস মিল বা ভুট্টা, ভেজিটেবল প্রভৃতি দিয়া তৈরি পশুখাদ্য ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করিতে হইবে।