শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান খুঁজিতে হইবে

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:০১

ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হল হইতে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করিয়াছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। এই চক্রের কয়েকজন সদস্য পরীক্ষার্থী হিসাবে ডিভাইস লইয়া হলে যায়। প্রশ্নপত্র পাওয়ামাত্র ডিভাইস দিয়া ছবি তুলিয়া কেন্দ্রের বাহিরে চক্রের অন্য সদস্যদের নিকট পাঠাইয়া দেয়। সেই প্রশ্নপত্র দ্রুত সমাধান করিয়া চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের নিকট সরবরাহ করা হয়। ইহার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর নিকট হইতে পাঁচ হইতে ১০ লক্ষ টাকা নেয় চক্রটি। গত শুক্রবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক (এসআই) পদে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতি চক্রে জড়িত ছিল গ্রেপ্তারকৃতরা। উপরন্তু জানা যাইতেছে, গ্রেপ্তারকৃত এই চক্রের এক সদস্যকে আগেও গ্রেপ্তার করা হইয়াছিল, জামিনে বাহির হইয়া আবারও জালিয়াতির কারবার শুরু করিয়াছেন তিনি।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হইয়া উঠিয়াছে। প্রথম শ্রেণি হইতে শুরু করিয়া প্রায় সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটিতেছে। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায়ও উঠিতেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ। এই বত্সর একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্য দিয়া এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হইয়াছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরাইয়া দিলে পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণাসহ এক ডজন সিদ্ধান্ত নিয়াও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যায় নাই। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও এই সংক্রান্ত অপরাধীদের দৌরাত্ম্য থামানো যাইতেছে না। ইতিপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা অস্বীকার করা হইলেও এখন আর স্বীকার না করিবার উপায় নাই। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অনেককে ধরা হইতেছে, কিন্তু সমস্যাটির মূলোত্পাটন করা যাইতেছে না। গ্রেপ্তার হইলেও জামিনে মুক্ত হইয়া অনেকে আবারও জালিয়াতি চক্রে জড়িত হইতেছে, অনেকে আবার সম্পূর্ণই ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকিয়া যাইতেছে। বস্তুত, পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস করিতে পারে চারটি পক্ষ— যাহারা প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করেন, যাহারা ছাপার কাজে যুক্ত, যাহারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন এবং যাহারা বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশ্নপত্র পরিবহন ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকেন। এই চারপক্ষের বাহিরে যাহারা থাকেন, তাহারা মূলত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের ব্যবসা করেন। অনেকেই মনে করেন, ওই চার পক্ষের মধ্যেই প্রকৃত অপরাধী আছে এবং তাহাদের চিহ্নিত করিয়া ব্যবস্থা না নিলে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হইবে না।

শিক্ষিত মানুষই দেশ-জাতির নেতৃত্ব দেন। অথচ শিক্ষার মতো একটি মৌলিক বিষয় নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হইতেছে গুটিকয় ব্যক্তির কারণে। প্রশ্ন ফাঁস, ভর্তিবাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থা। অবস্থা এমন দাঁড়াইয়াছে যে অনেকেই পড়াশুনা না করিয়া প্রশ্নপত্রের পিছনে ছুটিতেছে। আবার কেহ তেমন পড়াশুনা না করিয়া পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পাইয়া ভালো ফলও করিতেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হইয়া পড়িতেছে। প্রশ্নফাঁসের কারণে যাহারা সত্যিকারের মেধাবী ও পরিশ্রমী, তাহারা নিরুত্সাহিত হইতেছে। আর যাহারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিতেছে তাহাদের জীবনে সুনীতির চর্চা বাধাগ্রস্ত হইতেছে। সমাজের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি আস্থাহীনতার এই সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার স্থায়ীভাবে।