শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নগরীতে হাত বাড়ালেই বিদেশি খাবার

আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:১৯

’গ্লে­াবাল ভিলেজে’ দিনে দিনে সব কিছুর সাথে খাবার সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন আসছে। সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া এসে পড়েছে আমাদের দেশেও। দেশীয় বা কন্টিনেন্টাল খাবারের পাশাপাশি আমরা বিদেশি রকমারি খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। আর বিদেশি সেই সব মুখরোচক খাবারও বর্তমানে সহজলভ্য হয়ে এসেছে। খোদ রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে বসেই যে কোন দেশের খাবারের  স্বাদ নিতে পারছেন রসনা বিলাসী ভোজন রসিকরা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এখন বিশ্বের এমন কোন দেশের উপাদেয় খাবার নেই যা পাওয়া যায় না। মৌলিক স্বাদ ও আভিজাত্য না থাকলেও খাবার প্রস্তুতিতে মশলা ও উপাদান ঠিক রাখা হচ্ছে বলে দাবি করছেন রেস্তোরার মালিকরা। ’ইটিং আউট’ যেন ব্যস্ত নাগরিকের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর অভ্যাসকে অনুসঙ্গ দিচ্ছে ঢাকার বুকে গড়ে ওঠা ভিনদেশি বেশুমার খাবারের রেস্তোঁরা। নান্দনিক ইন্টেরিয়রের পাশাপাশি মনোলোভা খাবার আর আড্ডা সবই রয়েছে এসব রেস্তোঁরায়। একসময় ঢাকার রেস্তোরাঁয় বিদেশি খাবার বলতে ছিল চাইনিজ, থাই আর ভারতীয়। এখন দেশের মাটিতে বসেই বিশ্বের নানা অঞ্চলের খাবারের স্বাদ নেয়া যাচ্ছে। মেক্সিকান, ইতালিয়ান, টার্কিশ, অ্যারাবিয়ান, ভিয়েতনামি, চাইনিজ, জাপানিজ, থাই, কোরিয়ান, আমেরিকান, ইউরোপীয়, ব্রাজিলিয়ান, আফগানি, ইন্দোনেশিয়ান, স্প্যানিশসহ প্রায় সব দেশের রসনা বিলাসী খাবারের রেস্তোঁরা রয়েছে ঢাকাতে। রাজধানী ঢাকার কয়েকটি এলাকা এখন ক্যাফে রেস্টুরেন্টে সয়লাব। ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, খিলগাও, বেইলী রোডসহ কয়েকটি এলাকায় রেস্তোরা স্ট্রিট ও রেস্তোরাপাড়া রয়েছে। ছোট-খাট অনুষ্ঠান ছাড়াও ঘরোয়া খাবারের স্বাদের ভিন্নতা পেতে সেই সব রেস্তোরায় আসছেন সব শ্রেণীর মানুষ। জনবহুল ঢাকার ইট পাথরের দেয়ালে আবদ্ধ তরুন-তরুনী এবং আড্ডাবাজ মানুষের মিলন কেন্দ্র এখন রেস্তোরাগুলো।  খাদ্য রসিকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্যই ব্যস্ত নগরবাসী ঝুঁকছে বাইরের খাবারের দিকে।  গৃহিণীরাও এখন রান্নার ঝামেলা এড়াতে মাঝেমধ্যেই পরিবারসহ বেরিয়ে পড়েন, চলে যান আশপাশের কোন রেস্তোরায়। আর কর্মজীবী, ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগই বাইরের খাবারের ওপর নির্ভরশীল। অনেকেই বলছেন, মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে বলেই বাইরের খাবারের প্রতি তারা বেশি বেশি ঝুঁকছে। অন্যদিকে কিছুসংখ্যক উদ্যোক্তা তাদের জীবনমান উন্নত করার জন্যই রেস্তোরা ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। রসনা তৃপ্ত করার পাশাপাশি রাজধানীবাসীর কাছে এখন বেড়ানো ও বিনোদনের স্থান হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নজরকাড়া সব আধুনিক হোটেল-রেস্তোরা।  ঢাকায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে জাপানী সুশি, ভারতের মুসাকা, দোসা, চীনের পিকিং ডাক, সাউথ আমেরিকান বারবিকিউ রিবস, নিউজিল্যান্ডের পাভলোভা, মালয়েশিয়ান নারিকেল দুধ, সামুদ্রিক মাছ বা গুল্ম, শিমের বিচি, শসা ও মসলার তৈরি লাকসা, জাপানিজ টেপানিয়াকি, থাইল্যান্ডের সমতাম, পর্তুগীজ চিকেন, কোরিয়ান উইংস, চিকেন গার্লিক পিপার, সিপ্রং রোল, লেবানিজ কাবাব, বিরিয়ানি, রুটি, পেশোয়ারি নানরুটি, মাটন রিবস, মাটন লেগস, কান্দাহারি নান। ইতালিয়ান ‘থিন ক্রাস্ট বেইজ’ দিয়ে পিত্জা, ইন্দোনেশীয় ধারার নাসি গোরাং, কিং ফিশ (স্টেক, গ্রিল্ড), সিজলার ফিয়েস্টা, থাই ঘরানার স্টিমড ফিশ উইথ লেমন সস, অস্ট্রেলিয়ান বিফ স্টেক, ইতালিয়ান পাস্তাসহ ক্যাসেভিয়া, ফাজিতাস, স্টেক, পর্তুগীজ চিকেন, বিবিকিউ চিকেন পেরিপেরি. ওসেন গ্রেপ, ডিপডিশ পিত্জা, চাওমিন,শর্মা, র্যাপ, বিভিন্ন ধরণের কারি, ফ্রাইড রাইস, ফ্রাইড চিকেন, ক্যাসেভিয়া, ফাজিতাসসহ ভিনদেশি অসাধারণ সব খাবার। সুরা, ডায় জেং জিয়াম, কোরিয়ানা, অ্যারিরানসহ বেশ কয়েকটি কোরিয়ান খাবারের রেস্তোরাঁ আছে ঢাকায়। গুলশান, বনানী ও উত্তরায় এগুলোর অবস্থান।

দিল্লি­ দরবার রেস্টুরেন্টে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারের স্বাদ মিলছে। সামুদ্রিক খাবার যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা যাচ্ছেন পান্থপথের চৌরাস্তার পাশেই ক্লাউড বিস্ট্রোতে। গুলশান-২-এর টপকাপিতে চীনা, থাই, ভারতীয় ও টার্কিশ খাবার রয়েছে। টার্কিশ খাবার পদের মধ্যে থাকে পিলাফ (পোলাও), কেবাব, পি­সিস (মুরগির পদ)। গুলশান-২ এর হোটেল লংবিচ স্যুইটসের কজি সিজলার রেস্তোরাঁয় ৬০ রকমের খাবার থাকে। এর মধ্যে লবস্টার, অস্ট্রেলিয়ান বিফ স্টেক, ইতালিয়ান পাস্তা জনপ্রিয়। বনানীর ১১ নম্বর রোডে কোরিয়ান সিউল রেস্তোরাঁ। এখানে কোরিয়ান খাবার চিকেন ফ্রাইড, শ্রিম্প টেম্পুরা, বিফ বারবিকিউ, বিবিম বাব, চাইনিজ খাবার রাইস ডিস, মিক্স ভেজিটেবল এবং জাপানিজ সেসামি বেশ চলে। মিরপুর ও বারিধারায় ইন্দোনেশিয়ান খাবারের জন্য বিখ্যাত চেইন শপ বাবা রাফি।

 রোড ১১ বনানীতে চীনা ক্যান্টনিজ খাবার সম্ভার শিং হিয়ং তে। গুলশান এভিনিউতে বারবিকিউ ফ্লেইমস বারবিকিউ, ইতালিয়ান, কন্টিনেন্টাল ক্যুইজিনের খাবার পরিবেশন করে। গুলশান এভিনিউতে চাইনিজ ও থাই খাবারের রেস্তোরা ব্যাম্বু শ্যুট, গুলশান-২ তে বেলা ইতালিয়া ঢাকা শহরে ‘আসল’ ইতালিয়ান খাবারের স্বাদের রেস্তোরার মধ্যে অন্যতম। রোড ১১ বনানীতে মিউজিক ক্যাফে বা লাউঞ্জ হিসেবে ঢাকার পুরাতন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম কজমো। এছাড়া রয়েছে ইন্দোনেশীয় ধারার রেস্টুরেন্ট আরবান স্পাইস। রোড ১১ বনানীতে সাজনা-প্রথম দিককার ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁ হিসেবে পরিচিত। বনানীতে লাইভ কিচেন রেস্তোরাও পরিচিতি পেয়েছে। বনানীতে ওহ! ক্যালকাটা ’য় আছে পশ্চিমবাংলার খাবারের পসরা।

রোড ১১ বনানীসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় আছে নান্দোজ। আন্তর্জাতিক চেইন রেস্তোরাঁ বলা হলেও এটা এখন আর চেইন নেই। যেমন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যে সব কেএফসি এবং পিত্জা হাট রয়েছে সেগুলো চেইন রেস্তোরাঁ নয়। গুলশান এভিনিউতে আছে ডন জিয়োভান্নি। ১৯৯১ সাল থেকে ঢাকায় পিত্জার ব্যবসা করছে তারা। এখানে পিত্জা তৈরি হয় মাটির ওভেনে পুরানো কায়দায়। গুলশান এভিনিউতে সিগনেচার থাই ও কন্টিনেন্টাল কুজ্যিনের জন্য খ্যাত। ইতালিয়ান, মেক্সিকান ধারার খাবারের জন্য খ্যাত স্মোক মিউজিক ক্যাফে রোড ১১ বনানীতে অবস্থিত। ল্যাটিন খাবারের ফ্লেভার আছে বনানীর ক্লাব জেলাতোতে, ইতালীয় খাবার পাওয়া যায় স্প্যাগেতি জ্যাজ, গুলশান সার্কেলে। গুলশান এভিনিউতে আরো আছে হেরিটেজ, ব্রাজিল চুরাসকো, ব্যটন রুজ, বনানীতে আছে ফিয়েস্তা। এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে বনানীতে ঢুকলেই যেদিকে চোখ যাবে শুধুই বিদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ আর রেস্তোরাঁ। এখানে আছে প্লাটিনাম টেরেস, প্লাটিনাম সুইট, ক্যাফে ইতালিয়ানো, অফ ট্র্যাকসহ বহু রেস্তোরা। ঢাকা শহরে রেস্তোরা সংস্কৃতিতে যুক্ত হয়েছে উঁচু ভবনের ছাদের ওপর নিরিবিলি পরিবেশে ‘রুফটপ’ রেস্তোরা। এটাই এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।