শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চট্টগ্রামে গভীর রাতে বস্তিতে আগুন :শিশুসহ নিহত আট

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২৩:০০

নগরীর চাক্তাই এলাকায় বস্তিতে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে নারী ও শিশুসহ ৮ জন নিহত হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহতরা ঘুমন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষেরা সব কিছু হারিয়ে আহাজারি করছে। ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। নিহতরা হচ্ছে- রহিমা আক্তার (৫০), তার মেয়ে নাজমা আক্তার (১৪), ছেলে বাবু (৯), মেয়ে নাছরিন (৪), আয়েশা আক্তার (৩৭), তার ভাগিনা সোহাগ (১৮), হাসিনা আক্তার (৩৯) ও আর এক জনের পরিচয় জানা যায়নি।

রহিমা প্রথমে তার এক মেয়েকে বের করে। পরে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে আনতে ঘরে গেলে সন্তানসহ পুড়ে মরে রহিমা। রহিমার স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে। তাই রহিমা সন্তানদের নিয়ে এখানে থাকতেন।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, খবর পেয়ে রাত ৩টা ২০ মিনিটে ১০টি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। রাত সোয়া ৪টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এসময় আগুনে পুড়ে যাওয়া স্তূপ থেকে একে একে ৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অগিকাণ্ডের সময় নিহতরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। কোন কোন ঘর ভেতর থেকে তালাবদ্ধ থাকায় লোকজন দ্রুত বের হতে পারেনি। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বস্তি জুড়ে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহতদের প্রত্যককে দাফনের জন্য  ২০ হাজার টাকা করে সহায়তার আশ্বাস দেন।আগুনের উত্পত্তি সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, ঘরগুলোতে প্রচুর দাহ্যবস্তু ও বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। অনেকেই মশার কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমায়। রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডারও রয়েছে এসব ঘরে। আবার কোনো নাশকতা কি না বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পর আগুনের উত্পত্তি সম্পর্কে জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, বস্তিতে চোর, ডাকাত ও মাদকসেবীদের তত্পরতা থাকে। তাই বসবাসকারীদের অনেকেই রাতে দরজার ভেতরে তালা মেরে ঘুমায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি খাস জমিতে ১৪টি কলোনি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কলোনিতে প্রায় ২০০ ঘর রয়েছে। ১৩ জন লোক এসব কলোনির মালিক হিসেবে নিয়মিত ভাড়া আদায় করেন। কর্ণফুলীর তীরবর্তী জায়গা ভূমিদস্যুরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে দখলে নিয়ে কলোনি নির্মাণ করেছে। কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, কর্ণফুলী তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। তারা বাসা ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কলোনির মালিকরা তাদের বাসা না ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়ে থাকতে বাধ্য করেছে।

আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছে বস্তিবাসীরা। নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, জামা-কাপড়, চাল-ডাল, কাঁথা-বালিশসহ সব কিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুই বছর যাবত্ খুরশিদা বেগম এই বস্তিতে বসবাস করছেন। তিনি জানান, রাতে দরজার ভেতরে তালা মেরে ঘুমাইছি। চাবি খুঁজতে খুঁজতে সব কিছু পুড়ে গেছে। পারভিন আক্তার বলেন, সারাদিন পরিশ্রম করে ঘুমাতে রাত ১২টা বেজে যায়। রাত আড়াইটার দিকে সবাই আগুন আগুন বলে চিত্কার করলে জেগে উঠি। ঘরের জিনিসপত্র নিতে গেলে পুড়ে মরে যাবো। তখন ছেলেকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। রুমা আকতার জানান, আগুন লাগার পর সবাই রহিমার চিত্কার শুনে জেগে উঠি। কলোনির বাসিন্দা হোসনে আরা মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করেন। এক হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন কলোনিতে। তিনি বলেন, প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। বাসার সব কিছু পুড়ে গেছে।

এ দিকে, ক্ষতিগ্রস্ত কলোনির জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, এসব কলোনির জায়গার মালিকানা নিয়ে অনেকেই মামলা করেছেন। এখনো এসব জায়গার মালিকানা চিহ্নিত করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’