বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দশ জেলায় ৪ হাজার ১৮০ গণহত্যা

আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৯, ২২:৫৬

১০টি জেলায় মুক্তিযুদ্ধে ৪ হাজার ১৮০টি গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও ট্রাস্ট। গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ শীর্ষক দিনব্যাপী জাতীয় সেমিনারে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এ পর্যন্ত ২০ জেলার গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের গণহত্যার ফল প্রকাশ করছে গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও ট্রাস্ট। গতকাল শুক্রবার  সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও ট্রাস্ট। শুক্রবার সকালে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান। জরিপকৃত ১০টি জেলা হচ্ছে— বরিশাল, জামালপুর, পঞ্চগড়, কক্সবাজার, নড়াইল, যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার ও গাইবান্ধা। দিনব্যাপী সেমিনারে দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশন দুটিতে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. মো. মাহবুবর রহমান ও বীর প্রতীক কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের।

প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিশেষ করে গণহত্যা-বধ্যভূমি-গণকবর বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্য ও বাস্তবতা ওঠে আসবে। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নিয়ে ব্যস্ত আছি। শুধু বিজয় দেখলে মুক্তিযুদ্ধ প্রকাশিত হয় না। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বিশাল ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গণহত্যাকে আড়াল করা হয়েছে।

১৯৭১:গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর তত্ত্বাবধানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্প গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে একাত্তরে গণহত্যা নিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। গাইবান্ধা জেলার জরিপ করেছেন জহুরুল কাইয়ুম। তার ‘একাত্তরে গাইবান্ধা’ বইতে তিনি বলেছেন ১৩৬টি গণহত্যা, ৯টি গণকবর, ১০টি বধ্যভূমি ও ৯টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ মোট ১৬৪টি গণহত্যার ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। মামুন তরফদার ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস জামালপুর জেলা’ গ্রন্থে ১৯২টি গণহত্যা, ২২টি বধ্যভূমি, গণকবর ৩৩টি, ২১টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ ২৬৮টি গণহত্যার কথা উল্লেখ করেছেন। অনুপ কুমার মন্ডল নড়াইল জেলার জরিপে ১৪৯টি গণহত্যা, ৬টি বধ্যভূমি, ৪টি গণকবর, ৫টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ মোট ১৬১টি গণহত্যা ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেছেন। আজহারুল আজাদ জুয়েলের লালমনিরহাট জেলার জরিপে ৫৬২টি গণহত্যা, ১৮টি বধ্যভূমি, ৮টি গণকবর, ১৩টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ মোট ৬০১টি নির্যাতনের কথা উল্লেখ রয়েছে। আলী ছায়েদের জরিপে পঞ্চগড় জেলায় ৬৪৯টি গণহত্যা, ৪টি বধ্যভূমি, ১৭টি গণকবর, ২৩টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ ৬৯৩টি গণহত্যার স্মৃতিচিহ্নের কথা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার জরিপ করেছেন জয়দুল হোসেন। তিনি জরিপে ৩৪৩টি গণহত্যা, ৩৫টি বধ্যভূমি, ১৮০টি গণকবর, ৯২টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ মোট ৬৪৯টি গণহত্যা ও নির্যাতনের নিদর্শনের কথা তুলে ধরেছেন। শংকর কুমার মল্লিকের জরিপে যশোরে ৫৮৯টি গণহত্যা, ৩৯টি বধ্যভূমি, ৩৩টি গণকবর, ৩৬টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ মোট ৬৯৫টি গণহত্যা ও নির্যাতনের নিদর্শনের কথা উঠে এসেছে। তপন পালিতের জরিপে মৌলভীবাজারের ৩১৭টি গণহত্যা, ২৬টি বধ্যভূমি, ১৫টি গণকবর, ১৮টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ ৩৭৬টি গণহত্যা ও নির্যাতনের নিদর্শনের উল্লেখ রয়েছে। জগন্নাথ বড়ুয়ার জরিপে কক্সবাজার জেলার ১৯৫টি গণহত্যা, ২০টি বধ্যভূমি, ২৯টি গণকবর, ২৩টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ ২৬৭টি গণহত্যা ও নির্যাতনের নিদর্শনের উল্লেখ রয়েছে। মনিরুজ্জামান শাহীনের জরিপে বরিশালের ২৪০টি গণহত্যা, ২০টি বধ্যভূমি, ২৩টি গণকবর, ২৩টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ মোট ৩০৬টি গণহত্যা ও নির্যাতনের নিদর্শনের উল্লেখ রয়েছে।