শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আইএসের খেলাফত পতনের দাবি মার্কিন কোয়ালিশনের

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৯, ২২:৫২

মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের খেলাফত পতনের দাবি করেছে মার্কিন কোয়ালিশন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। গতকাল শনিবার এসডিএফ’র মিডিয়া অফিসের প্রধান মুস্তাফা বালি এক টুইটে ‘খেলাফতের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ’ এবং ‘আইসিসের দখল করা সব এলাকা শতভাগ মুক্ত করার’ দাবি করেন। পূর্ব সিরিয়ায় আইএসের সর্বশেষ ঘাঁটি বাঘুজ শনিবরাই দখলে নিয়ে এসডিএফ তাদের পতাকা উড়িয়েছে বলে জানান। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, শিগগিরই আইএস পরাজিত হবে। তবে বাঘুজের পতন যখন অত্যাসন্ন তখনো আইএস তাদের কথিত মুখপাত্র আবু হাসান আল-মুহাজিরের একটি অডিও বার্তা প্রচার করেছিল। তাতে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, খিলাফত শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূখণ্ডহীন আইএস এখনো বিশ্ব নিরাপত্তার প্রধান হুমকি। মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, আইএস’এর ১৫ থেকে ২০ হাজার সশস্ত্র সদস্য ওই অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এর অনেকগুলোই ‘স্লিপার সেল’ অর্থাত্ তারা এখন গোপনে অবস্থান করছে এবং আইএস পুনর্গঠিত হওয়া শুরু করলেই তারা আবার ভেসে উঠবে। খবর:সিএনএন ও বিবিসি’র।

ইরাকে ২০০৩ সালের মার্কিন অভিযানের পরবর্তীকালে ‘ইরাকি আল-কায়েদা’ থেকে ‘ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক’ এর জন্ম হয়। ২০১১ সালে তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দেয়। সিরিয়ার রাক্কা হয় তাদের রাজধানী। তাদের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি গোষ্ঠীটির নতুন নাম দেন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এ্যান্ড দি লেভান্ট (সিরিয়া)- সংক্ষেপে আইসিস বা আইসিল। ২০১৪ সালে জিহাদি গ্রুপটি ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। যার নাম হয় ইসলামিক স্টেট। এ সময় তারা সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতো। তারা মসুল এবং তিকরিতসহ অনেক ইরাকি শহর এবং সিরিয়ার বৃহত্তম হোমস তেলক্ষেত্র দখল করে নেয়। তেল বিক্রি, চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং ডাকাতি করে তারা শত শত কোটি ডলার আয় করেছিল। সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা আইএস’র পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিল। আইএস যোদ্ধারা ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা এবং ইয়াজিদি নারীদের যৌনদাসীতে পরিণত করে। তারা পশ্চিমা জিম্মিদের শিরশ্ছেদের বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রচার করে।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী তাদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কম্বাইন্ড জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স-অপারেশন ইনহেরেন্ট রিসলভ (সিজেটিএফ-ওআইআর) গঠন করে। সর্বশেষ এই কোয়ালিশনে ৭৯টি দেশ যুক্ত হয়। আইএসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক কোয়ালিশনের অভিযানের পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন ও সহায়তা দেওয়া হয় জোটের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে রাশিয়া নেতৃত্বাধীন একটি জোটও আইএস বিরোধী লড়াইয়ে নামে।

রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন সমর্থিত এসডিএফ আইএস’র বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই শুরু করে কয়েক সপ্তাহ আগেই। কিন্তু আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বহু বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছেন এমন তথ্য প্রকাশের পর সেই অভিযানের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। লড়াই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাজার হাজার নারী ও শিশু সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপরই চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয়। শনিবার সকালেও বাঘুজে গোলাগুলি ও মর্টারের গোলাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। 

আইএস-কোয়ালিশন লড়াইয়ে ক্ষয়ক্ষতি

আইএস বিরোধী বিশ্ব কোয়ালিশনের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত কতজন মারা গেছেন তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে ব্রিটেনভিত্তিক মনিটরিং গ্রুপ দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ৩ লাখ ৭১ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে বেসামরিক মানুষের সংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার ছয়শো। জাতিসংঘ বলছে, সন্ত্রাস, সহিংসতা ও সশস্ত্র সংঘর্ষে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে ইরাকে ৩০ হাজার ৯১২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তবে ইরাক বড়ি কাউন্ট নামে একটি সংস্থার দাবি নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজারের ওপরে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ ও আইএস বিরোধী লড়াইয়ে ৬৬ লাখ সিরীয় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে ৫৬ লাখ লোক।

আইএস এখনো হুমকি

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলেও আইএস এখনো বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য প্রধান হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। আইএস’র প্রভাব ঐ এলাকায় এখনো নিঃশেষ হয়ে যায়নি। নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং ফিলিপাইনে এখনো বহু আইএস অনুসারী রয়ে গেছে। তাদের পুনরুত্থান ঠেকাতে দীর্ঘ মেয়াদী কৌশল প্রণয়ন করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।