শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দিনভর খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে ধরনা

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৪৯

বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতরা তাদের কর্মী-সমর্থক সমেত গতকাল রবিবার প্রায় সারাদিন ধর্না দিয়েছেন গুলশানে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে। মনোনয়নের দাবিতে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। আবার বঞ্চিত করে যাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়েছেন। সকাল দশটা থেকেই সেখানে অবস্থান নেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. আবদুল্লাহ এবং কুমিল্লা-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির কর্মী-সমর্থকরা। অফিসের মুল ফটক অবরোধ করে তারা অব্যাহত শ্লোগান দিতে থাকেন ‘অবৈধ মনোনয়ন মানি না মানবো না’। দুপুরে ভেতর থেকে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় এখানে বিক্ষোভ করে লাভ নেই। সময় শেষ। তারপরও সেখানে তারা ধর্না দিতে থাকেন। গতকাল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিকাল পর্যন্ত কার্যালয়ে যাননি। কুমিল্লা-৪ এ জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে।

বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত মনোনয়নবঞ্চিত দুই প্রার্থীর অনুসারীদের তোপের মুখে পড়েন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বের হলেই তাকে ঘিরে ধরে মনোনয়নবঞ্চিত মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির সমর্থকরা শ্লোগান দিতে থাকেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী তখন বলেন, তিনি বিএনপিরও কেউ নন, মনোনয়ন দেওয়াও তার বিষয় নয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্বার্থে অনেক কিছু করা হয়েছে। পরে সমন্বয় করা হবে। জোট ক্ষমতায় গেলে কাউকে চাইলে সরাসরি মন্ত্রীও বানাতে পারে। সুযোগতো আছেই। বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, উত্তরার নিজ বাসা থেকে চূড়ান্ত মনোনীতদের চিঠি দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে শনিবারের মনোনয়ন বঞ্চিত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজনকে গতকাল প্রার্থী করা হয়েছে। শেরপুর-২ আসনে এ কে এম মোখলেছুর রহমান রিপনের মনোনয়ন বদল করে গতকাল সাবেক হুইপ মরহুম জাহিদ আলী চৌধুরীর ছেলে ফাহিম চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত মনোনয়ন। শনিবার ফাহিমের সমর্থকরা গুলশান অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন। এদিকে গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা বিএনপির নগর বিএনপির সভাপতি আবু সুফিয়ানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শেরপুর-২ আসনে এ কে এম মোখলেছুর রহমান রিপনের বদলে সাবেক হুইপ মরহুম জাহিদ আলী চৌধুরীর ছেলে ফাহিম চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত মনোনয়ন। মানিকগঞ্জ-১ (শিবালয়, ঘিওর ও দৌলতপুর) আসনে প্রার্থী বদলে মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আব্দুল হামিদ ডাবলুকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার গুঞ্জন ছড়ালেও তাকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।সেখানে এসএম জিন্নাহ কবিরই বহাল।

এছাড়া প্রার্থী বদল হওয়া আসনগুলো হলো- সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিসের বদলে এমএ মুহিত, ভোলা-১ আসনে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর বদলে বিএনপির গোলাম নবী আলমগীর। সিলেট-৫ আসনে জামায়াতের মাওলানা ফরিদুদ্দীন আহমেদের বদলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর ওবায়দুল্লাহ ফারুক, সিলেট-৬ আসনে জামায়াতের হাবিবুর রহমানের বদলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

গণফোরামের মনোনয়ন বঞ্ছিতরা ক্ষুব্ধ

বিএনপির কাছে ২০টি আসনে গণফোরামের প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার ড. কামাল হোসেন। কিন্তু ভোটের হিসাব নিকাশে শেষ অবধি ৫টি আসন পেয়েছে তার দল। বিএনপির কাছ থেকে কাঙিক্ষত আসনগুলো না পাওয়ায় বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন বঞ্চিত কয়েকজন নেতা। গণফোরামের মনোনয়ন বঞ্চিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জগলুল আফ্রিদ সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে গর্ত থেকে তুলে এনেছেন। কিন্তু আসন ভাগাভাগির বিষয়ে অবমূল্যায়ণ করা হয়েছে। এর ফলে তৃণমূলের নেতাদের মনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, কিছুটা ক্ষোভ তো থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক।

ধানের শীষে জামায়াতের ২১ প্রার্থী, দুটি আসন উন্মুক্ত

২২ আসনই মেনে নিতে হলো জামায়াতকে। এর মধ্যে ২১ আসনে ধানের শীষ পেয়েছেন তারা। একটিতে স্বতন্ত্র। তবে জোটগত মনোনয়নের বাইরে দুটি আসনে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে বিএনপি। এক্ষেত্রে এই দুটি আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা পৃথকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জামায়াতের নেতারা বলছেন, বরাবরই জামায়াতকে ছাড় দিতে হয়।

জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের তো বরাবরই কোরবানি হতে হয়। আমাদের তিনটি সিট কম দিয়েছে। তদবির করার পরও তিনটি দিলো না, ২২টি পেলাম।

২ আসনে ধানের শীষ নেই

বিএনপি গতকাল ২৯৮ টি আসনে ধানের শীষের চূড়ান্ত তালিকা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে। দুইটি আসনে ধানের শীষ থাকছে না। চট্রগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির কর্নেল অব. অলি আহমেদ তার দলের প্রতীক ’ছাতা’ এবং কক্সবাজার -২ আসনে জামায়াতের হামিদুর রহমান আজাদ স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন।