শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চট্টগ্রামে যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী

আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:১২

চট্টগ্রামে যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনাও। প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন স্পটে যানজট লেগে থাকে। যানজটের কারণে বিমানের যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সের রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার। অপরিকল্পিত বাসস্ট্যান্ডের কারণে নগরীর চার প্রবেশমুখ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। নগরীর অক্সিজেন মোড়, শাহ আমানত সেতু চত্বর, কাপ্তাই রাস্তার মাথা এবং সিটি গেট-কর্নেল হাটে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। যত্রতত্র যানবাহন দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করানোর কারণে প্রতিটি মোড়েই এক ধরনের বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। নগরের অভ্যন্তরে দিনে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য মালবাহী যানবাহন চলাচল এবং অবৈধ পার্কিং-এর ফলে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন (যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক) চলাচলের ফলে সড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন কলেজ ছাত্রীসহ একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা না থাকার জন্য ট্রাফিক পুলিশের অবহেলা ও চাঁদাবাজিকে দায়ী করছেন অনেকে।

চুয়েটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড়ের দূরত্ব ৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। শহর এলাকায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি (ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার) অনুযায়ী, এ পথ পাড়ি দিতে সর্বোচ্চ ১২ মিনিট লাগার কথা। কিন্তু লাগছে কমপক্ষে ২৭ মিনিট। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগার কারণ যানজট। যানজটের কারণে শহরে গাড়ির গতি কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারে।

নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হলেও বিমানবন্দর সড়কে যানজট পরিস্থিতি সবচেয়ে মারাত্মক। বিমান ধরার জন্য কয়েক ঘণ্টা আগে যাত্রা শুরু করেও যানজটের কারণে অনেকে ফ্লাইট মিস করেন। গতকাল শুক্রবার এ সড়কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার পরিবহনে নিয়োজিত লরিগুলো (প্রাইমমুভার) প্রধান সড়কের দুই পাশে পার্কিং টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এ ছাড়া বন্দরের ভেতরে ঢোকার জন্য অপেক্ষমাণ ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের সারিও যানজটের অন্যতম কারণ। ব্যস্ততম এ সড়কের আশপাশের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলো যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিচ্ছে, যা সড়কে যানজট বাড়াচ্ছে। ফলে নগরের বিভিন্ন সড়কেও যানজট ছড়িয়ে পড়ছে। বিমানবন্দরে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক হওয়ায় বিদেশি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, পর্যটকরা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পরই যানজটের কবলে পড়েন।

এ দিকে, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নগরীতে দিনে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। সিএমপি সূত্র জানায়, প্রতিদিন সকাল আটটা হতে রাত আটটা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লং-ভেহিকেল, প্রাইমমুভারসহ অন্যান্য পণ্য ও মালবাহী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। রাত আটটার পর পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল ও মালামাল ওঠা-নামা করানো যাবে। তবে জরুরি আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য, পণ্য ও রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য বিশেষ ব্যবস্থায় চলাচল করতে পারবে।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান ইত্তেফাককে জানান, নগরীতে দিনের বেলায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আগেও ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরনগরী হওয়ায় এ নিয়ম কার্যকর করা বেশ কঠিন। জরুরি খাদ্যপরিবাহী একটি ট্রাক আমি আটকে রাখতে পারি না। আবার চট্টগ্রামকে বাইপাস করার মতো বিকল্প কোনো সড়কও নেই। তবে গত কয়েকদিনে নগরীতে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটায় দিনের বেলায় ভারী যানবাহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।