শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছাতকে সুরমা সেতুর নির্মাণ কাজে ত্রুটি

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:৩৫

ছাতকে সুরমা নদীর উপর নির্মাণাধীন সুরমা সেতুর নির্মাণ কাজে ত্রুটি ধরা পড়েছে। এই ত্রুটি ধামাচাপা দিতে জোড়া-তালি দিয়ে ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত সেতুটির নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। ফলে ভবিষ্যতে এ সেতু মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছে। সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

নদীর দক্ষিণ পাড় শ্যামপাড়া সংলগ্ন এলাকায় ২য় পিলারের গার্ডার স্থাপনের পর এই ত্রুটি ধরা পড়ে। সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে পিলারগুলো উচ্চ ক্রম অনুসারে সাজানো হয়ে থাকে। নদীর মাঝামাঝি অংশে গিয়ে আবার ক্রমান্বয়ে নিচু হয়ে অন্য তীরের দিকে যায়। কিন্তু সুরমা সেতুর ক্ষেত্রে ১ম পিলারের চেয়ে নদীর দিকে অগ্রসর ২য় পিলারটি এক থেকে দেড় ফুট খাটো। ত্রুটি ধরা পড়লে ত্রুটিযুক্ত পিলারের মাথায় গার্ডারের নীচে সিসি ঢালাই দিয়ে ‘সঠিক উচ্চতায়’ আনার চেষ্টা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার ত্রুটির কথা স্বীকার করে এর জন্য দু’টি ধাপে তৈরি ব্রীজের প্ল্যানিংকেই দায়ী করছেন। তবে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হবে না বলে তিনি দাবি করেন। 

ছাতক-দোয়ারাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল সুরমা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ। ৪টি শর্ত দিয়ে ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ১৭৪ টাকা ব্যয় ধরে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুরমা সেতুর কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ‘জন্মভূমি নির্মাতা’ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের মূল পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সেতু নির্মাণের প্রাক্কলন তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে শহরের শ্যামপাড়া এলাকায় ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট সুরমা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিএনপি সরকারের একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে তিন বছর মেয়াদে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর উভয় তীরে চারটি স্তম্ভ নির্মাণ করাই ছিল সেতু নির্মাণের সর্বশেষ কাজ। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেতু নির্মাণে ব্যাপক অসংগতি রয়েছে বলে প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি থেকে বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে সেতুটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি সংশোধিত নতুন প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এ আবেদনটি বিশেষ বিবেচনায় এনে ১১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার পুনঃ সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে। ২০১৬ সালের জুন মাসে সংসদে সুরমা সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। এ দাবির প্রেক্ষিতেই অক্টোবর মাসে পরিকল্পিত এপ্রোচ ও নেভিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সেতু নির্মাণে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদনের প্রায় ১০ মাস পর সেতুর কার্যাদেশ প্রদান করা হলে নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করে।

ছাতকের সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী সমরেন্দ  দাস তালুকদার বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান অনুযায়ী সেতুর পিলার মাঝ নদী পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে উঁচু হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ১ম পিলার থেকে ২য় পিলারের উচ্চতা হবে ন্যূনতম ১ ফুট ৩ ইঞ্চি। গার্ডারের নীচে সিসি ঢালাই দিয়ে লেভেলে আনা ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিকাদার লুত্ফুর রহমান ত্রুটির কথা স্বীকার করে জানান, দুটি প্ল্যানে সেতুর প্ল্যানিং করা হয়েছে।  যে কারণে সামান্য ত্রুটি দেখা দিয়েছে। গার্ডারের নীচে ঢালাই দিয়ে লেভেল ঠিক করা হয়েছে।