স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া ডন মিঠু এবং সিন্ডিকেট সদস্য আবজালের তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরো ছয় সদস্যের ব্যাপারে তথ্য। কেনাকাটা ও আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে তারা। এই ছয় সদস্যের মধ্যে— দুই জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, দুই জন পরিচালক ও উপ-পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়ি চালকও রয়েছেন এই সিন্ডিকেটে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিএমএসডি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ওষুধ প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নার্সিং অধিদফতর ছাড়াও প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, স্বাস্থ্য বিভাগীয় অফিস, সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ সকল স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব জায়গায় তাদের পদচারণা। সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে। বিশেষ করে কেনাকাটার নামে হয় হরিলুট।
সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে আউটসোর্সিং বা তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে সেবা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় ঠিকাদারের মাধ্যমে। যে পরিমাণ বেতন প্রতিটি নিয়োগপ্রাপ্তদের দেওয়ার কথা তার অর্ধেক অংশ ওই ঠিকাদার নিয়ে যায়। অপরদিকে প্রতিটি নিয়োগেও চাকরি দেওয়ার নামে তারা কয়েক লাখ টাকা প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে নেয়। অথচ নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীরা ৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, আউটসোর্সিং নিয়োগের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। চিকিত্সা সেবার মানে কোনো সহায়ক ভূমিকা পালন করে না। জানা গেছে, আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে চার/পাঁচ মাস পরপর নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করলেই ছাঁটাইয়ের হুমকি দেওয়া হয়, ফলে ক্ষোভ থাকলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায় না কর্মচারীরা।
স্বাস্থ্যখাতে অনেক প্রতিষ্ঠানে টেন্ডার ঘোষণা ছাড়াই কোটি কোটি টাকার কাজ শত শত ভাগে বিভক্ত করে কেবল রিসিট ভাউচারের মাধ্যমেই কেনাকাটা হয়। কাগজপত্রে ক্রয় দেখানো হয় উচ্চমূল্যে। কিন্তু কেনা হয় নিম্নমানের জিনিসপত্র। অনেক হাসপাতালে এসব যন্ত্র এখনো বাক্সবন্দি হয়ে আছে।
উল্লেখ্য, অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে আসবাবপত্র কেনার নামে রীতিমতো পুকুর চুরি হয়েছে। চুরি আর অনিয়মের মাত্রা এতই বেপরোয়া যে-শুনলে যে কারোরই চোখ কপালে উঠবে! মেডিক্যাল কলেজটির আসবাব কেনার নামে প্রায় ২১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে এই পুকুর চুরির বন্দোবস্ত করা হয়। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সিন্ডিকেট এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এমনকি কেনাকাটায় চরম অনিয়ম-দুর্নীতি হলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে ঠিকাদারকে বিল পাইয়ে দিতে নানান রকমের জাল-জালিয়াতি করেছে দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেট।