বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

লাউয়াছড়ায় কমছে বন হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৯, ২২:১৫

আজ বিশ্ব বন দিবস। তবে ভালো নেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া বন। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গত দুই যুগে বনের গভীরতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। জাতীয় এ উদ্যানটিতে পুরনো প্রাকৃতিক গাছগুলো ক্রমান্ব্বয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কাঠ চোরচক্রের অপতত্পরতাসহ নানা কার্যক্রমের ফলে

এ বনের সংকটাপন্ন অবস্থা। বন ফাঁকা হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য।

লাউয়াছড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯১৭ সালে আসাম সরকার পশ্চিম ভানুগাছের ১২৫০ হেক্টর এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। পরবর্তী সময়ে ১৯২৩ ও ১৯২৫ খ্রিঃ পর্যায়ক্রমে কালাছড়া ও চাউতলী এলাকাকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে। বনের চারপাশ ঘিরে চা বাগান, হাওর, সংরক্ষিত বন ও গ্রামগঞ্জ রয়েছে।

লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লুক, হনুমান, ছোট লেজি বানর, লজ্জাবতি বানর, সজারুসহ বিরল প্রজাতির প্রাণী।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জের প্রাক্তন কর্মকর্তা সাহাব আলী বলেন, ৩৫ বছর পূর্বেও লাউয়াছড়ায় যে বন ছিল সেটি এখন আর নেই। উদ্যানে ক্লোরোফর্ম গাছটিও নেই। চন্দন, আগর, সেগুন, চাপালিশ প্রজাতির বৃহদাকার গাছ ছিল সেগুলো এখন আর নেই। গাছ-বাঁশ চুরি হয়ে বন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বনের ভেতর দিয়ে রেল ও সড়কপথ থাকায় ট্রেনের ধাক্কায় কিংবা সড়কপথে সাপ, শূকর, শিয়াল হরদম মারা যাচ্ছে।

লাউয়াছড়া উদ্যানের পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা আসিদ আলী বলেন, বনে খাবার সংকটে রাতে শূকর, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণী গ্রামগঞ্জে চলে আসে। ক্ষেতের ধান ও সবজি বিনষ্ট করে। এ ছাড়াও ৯৭ সালে মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণে গাছগাছালি মারা যাওয়ায় প্রকৃতি মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে। কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ বলেন, গাছ শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রকৃতিও শেষ হয়ে লাউয়াছড়া তার যৌবন হারিয়ে ফেলছে।

সিলেট বন বিভাগের সহকারী বন কর্মকর্তা মোঃ আবু বক্কর বলেন, বনের গভীরতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন স্থানে সামাজিক বনায়ন তৈরি করা হচ্ছে। তা ছাড়া এখন আর গাছ চুরির ঘটনা ঘটছে না।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় জীববৈচিত্র্যময় বন গবেষণা কেন্দ্রসহ এ উদ্যানে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর বিচরণ।