বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নিরাপদ সড়কের জন্য

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৭

রিফাত মুনীর ইতি

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকের অনিয়ন্ত্রিত গতিকে দায়ী করে আসছেন অনেকে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যুহার বাড়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যা সমাধান না করলে এই অনাহূত মৃত্যু এড়ানো অসম্ভব। এ প্রসঙ্গে বলা যায়—

এক. যে কোনো রাস্তা তৈরি হয় তার নির্দিষ্ট মালামাল ও পরিবহন ক্ষমতার উপযোগী হিসেবে। আমাদের বিশেষত হাইওয়েগুলোতে যাত্রী ও মালের বোঝা নিয়ে চলা কোনো দূরপাল­ার বাস, ট্রাক, লরি, পিকআপ কিংবা প্রাইভেট গাড়ির কোনো ধরনের মনিটরিং নেই। এর ফলে দ্রুত রাস্তা নষ্ট হওয়াই শুধু নয়, প্রবল ঝুঁকি নিয়ে এসব যানবাহন নিয়ত দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলছে।

দুই. গাড়ির ফিটনেস না থাকা সত্ত্বেও, জেনে বুঝে যেসব যাত্রী তার পরিবহনসেবা নিচ্ছেন, পরোক্ষভাবে তারাও সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী। আমরা নিজেরা সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি জেনে ও সময় বাঁচাতে, যে দুর্ঘটনা নিজে যেচে ডেকে আনি তা শুধু প্রাণহানি বা আর্থিক ক্ষতির কারণ হয় না, বরং আমাদের নাগরিক দায়বদ্ধতাকে পরোক্ষভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

তিন. চলন্ত অবস্থায় চালককে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিরস্ত করা দূরে থাকুক, অনেক যাত্রীই তাদের সঙ্গে খোশগল্প জুড়ে দেন। আবার কোনো কারণে রাস্তার সর্বোচ্চ গতিসীমা লক্ষ না করে পেছনের গাড়ি কোনোভাবে যদি অতিক্রম করে ফেলে, তাহলে বেচারা চালককে কম গালমন্দ, ভর্ত্সনা শুনতে হয় না। অর্থাত্ যাত্রীরাই কিন্তু পরোক্ষভাবে ওভারটেকিংয়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয় চালককে, নিয়ত দিচ্ছে। ফলাফল, সড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।

চার. ফুটওভারব্রিজের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে দিলে এবং এই আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের তাত্ক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনবে শতকরা চলি­শ ভাগ। এজন্য মিডিয়ার নিয়ত প্রচারণাও একটা ভূমিকা রাখতে পারে। সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি জরিমানাসহ স্ব অথবা বিনাশ্রম কারাদণ্ডের ভয় আমাদের সড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কমিয়ে আনবে।

পাঁচ. অবৈধ দখলের হাত থেকে ফুটপাত রক্ষা এবং গাড়ির যত্রতত্র পার্কিং রোধ, শতকরা আট থেকে দশভাগ সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনবে। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ জরুরি।

ছয়. একজন ড্রাইভার একইসঙ্গে একজন মানুষ; কাজেই নির্দিষ্ট কিছু দূরত্ব অতিক্রম হবার পর তার প্রয়োজনীয় খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা অবশ্য কর্তব্য। এটি নিঃসন্দেহে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার কমিয়ে দেবে।

সবশেষে, আমাদের উচিত, এইসব বিষয়ে অন্তত সামান্য হলেও দৃষ্টি দেওয়া।

ঢাকা