ফারহানা মান্নান
জীবনের প্রথম পাঁচ বছর একটা বাচ্চার সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এই পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বাচ্চার পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলে। এটা অনেকখানি নিশ্চিত করে যে সে বড় হয়ে কেমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবে। কাজেই এ সময়টাতে অভিভাবকের সঙ্গে বাচ্চার সুন্দর সম্পর্কের চর্চা ভীষণভাবে জরুরি।
এখন চর্চার খাতিরে অভিভাবক হিসেবে কী করা যায়? আসলে বাচ্চা জন্মের পর থেকেই কিন্তু এই সম্পর্কের চর্চার শুরুটা হওয়া উচিত। নব ভূমিষ্ঠ বাচ্চার হাত ধরা, বুকের ওপর রেখে পিঠ আলতো করে বুলিয়ে দেওয়া, গালে গালে ছুঁয়ে দেওয়া, নাক আলতো করে ধরা—এসবই কিন্তু সম্পর্ক তৈরির শুরুর গাথা। আস্তে আস্তে একটু বড় হলে যখন হাঁটতে শেখে তখন খেলনা নিয়ে খেলা, প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো, মিউজিক শোনানো, প্রকৃতির মাঝে নিয়ে যাওয়া।
আমাদের রাজধানী শহরের স্কুলগুলোতে অভিভাবকেরা এখন সাড়ে তিন বছরেই বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে দেন। কাজেই স্কুল শুরুর আগে প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে পরিচিতি এবং বাইরের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে শেখানোটা বেশ জরুরি। এতে করে স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব অসুবিধে হয় না। তবে শহরের বাইরে গ্রামে বা দূরের স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্কুল আছে সেখানে নেওয়ার আগেও বাচ্চাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করাটা জরুরি।
আসলে কেবলমাত্র স্কুলের প্রস্তুতি হিসেবে নয়, কারণ সেটা ৫ বছরের মধ্যে একটা অংশ। আসল ব্যাপারটা হলো একটা বাচ্চাকে এ পাঁচ বছরের মধ্যে মানসিক, আবেগিক, সামাজিক, শারীরিক ও ভাষাগত দিক থেকে এমনভাবে প্রস্তুত করা যাতে করে তাঁর ভবিষ্যতের জীবনে সে একজন সুবিবেচনাপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে।
পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই একটা বাচ্চার মস্তিষ্কের ৯০% বিকাশ সাধন হয়ে যায়! কাজেই এ সময়টা ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ—স্কুলের প্রস্তুতি হিসেবে, পরবর্তী জীবনের সুন্দর গঠনের জন্য, সুন্দর মানসিক ও আবেগিক বিকাশের জন্য এমনকি অভিভাবকের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন তৈরির ক্ষেত্রেও। তাহলে জীবনের পাঁচ বছরের সময়টাকে আর অবহেলা নয়, বরং অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েই গড়তে হবে।
ঢাকা