শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুস্থ দেহে সুস্থ মন

আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৫৩

 

ল্যাটিন ভাষায় Mens sana in corpore sano  অর্থ A sound mind in a sound body। সুস্থ দেহে সুস্থ মন। শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু আয়ত্ত করা এবং অনুধাবন করার জন্য আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে উপযুক্ত পরিবেশ অর্থাত্ দেহ, মন এবং আত্মিক বিকাশের জন্য পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। যেহেতু শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। একজন ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশই পরিপূর্ণ শিক্ষা। পুঁথিগত বিদ্যা কোনোদিনই পরিপূর্ণ মানুষ করতে পারে না।

জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ অনুসারে স্বাস্থ্য ও শারীরিক  শিক্ষা এবং চারু-কারু পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু পাঠ্যবইটি মাধ্যমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। তারপর আর নেই। তবে কি শুধু খেলাধুলা, ব্যায়াম, মননশীল বিকাশ, শারীরিক বিকাশ মাধ্যমিক পর্যায়েই প্রয়োজন? তাই বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েও পেল না। খুবই দুঃখজনক। কেন মাধ্যমিক পর্যায়ে অতিরিক্ত একটি বিষয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে? বলা বাহুল্য, শহরের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করার সুযোগ পায় না। পড়ালেখার চাপে কোণঠাসা হয়ে আছে। কারণ যেভাবেই হোক এ প্ল­াস তো পেতেই হবে। খেলাধুলার সনদ তো কোথাও চাওয়া হয় না।  যে সময়টা  ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করবে, সে সময়টা কাটাতে হয় কোচিংয়ে বা প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে।

স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা সব বইয়ের নিচে, তদুপরি একেবারে নতুন। পরীক্ষায় লিখতে হয় না। কোনো কোচিংয়েও বইটি পড়ানো হয় না। ধারাবাহিক মূল্যায়নে নম্বর প্রদান। সে তো আমরা শিক্ষকরাই বুঝি না। কারণ এর কোনো নির্দেশনা নেই বললেই চলে। শিক্ষকরা তো নম্বর কিনে আনবে না। সুতরাং দিতে কৃপণতা করার কী আছে? কিন্তু কেন বইটি পাঠ্য করা হলো তা আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কেউ একবারও ভেবে দেখিনি। গ্রামীণ পরিবেশে তো খেলাধুলার প্রশ্নই আসে না। মেয়ে একটু বড় হয়েছে তো ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। ছেলেরা কিছুটা সময় পেলে তো মোবাইলফোন নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এ প্ল­াস পেতে হলে যে শিক্ষার্থীর দেহ মন সুস্থ থাকা দরকার সেটা শিক্ষকগণ ভাবলেও অভিভাবকদের ভাবার প্রয়োজন নেই!

সরকার যে কোনো মাধ্যমেই হোক বছরে দুইবার খেলাধুলার ব্যবস্থা করেছে—একটা গ্রীষ্মকালীন অন্যটা শীতকালীন। এতে রয়েছে ফুটবল, ভলিবল, কাবাডি, সাঁতার, হ্যান্ডবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন। ছেলে এবং মেয়ে প্রত্যেকের জন্য একই খেলা প্রযোজ্য। কিন্তু খেলোয়ার পাব কোথায়? শহরের যারা তারা তো ফার্স্ট ফুড খেয়ে ফার্মের মুরগি হয়ে গেছে। তাদের তো খেলার প্রশ্নই আসে না। আর যারা গ্রামে তারা ফুটবল খেলবে তাও আবার মেয়েরা! অভিভাবকের মাথায় বাজ। বল খেললে এই মেয়েকে তো বিয়েই দিতে পারবে না। তাই এই খেলাগুলোতে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেকাংশে কম। যেটুকু অংশগ্রহণ তা শিক্ষকগণ অনেক খড়কাঠ পুড়িয়ে তারপর সম্ভব হয়েছে। কিন্তু খেলতে গিয়ে মেয়ে আঘাত পেলে শিক্ষকের রফাদফা করে শেষ। তাই এই বিষয়ে কিছু সুপারিশ—

১. যে সব শিক্ষার্থী  খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করবে তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকসহ আর্থিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা।

২. চিকিত্সার জন্য বিশেষ ফান্ডের ব্যবস্থাকরণ।

৩. খেলাধুলায় প্রাপ্ত সনদ পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন করা।

৫. স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া।

৬. অভিভাবকদের আগ্রহী করার জন্য মোটিভেশান সরকারিভাবে করা।

৭. BKSP-এর মতো আরো প্রতিষ্ঠান স্থাপন।

৮. অভিজ্ঞ  শিক্ষক বা ব্যক্তি দিয়ে খেলা পরিচালনা করা। এখানে অভিজ্ঞ বলতে শুধু খেলাধুলায় পারদর্শী বোঝানো হয়নি। সৃজনশীল এবং সুস্থ মন-মানসিকতার কথা বোঝানো হয়েছে। দেখা যায়, অনেক সময় অনেকে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো এলাকার পক্ষপাতিত্ব করেন। এ ধরনের ব্যক্তিকে দূরে রাখা। কারণ এতে শিক্ষার্থীর মন ভেঙে যায়।

ময়মনসিংহ